বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের রাজনৈতিক দূরদর্শিতাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেগম মুজিবের ৮৬তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বেগম মুজিবের দৃঢ় অবস্থানই পরবর্তীতে স্বাধীনতা এনেছে।
‘আমাদের বাসায় ফ্রিজ ছিল। আব্বা আমেরিকায় যখন গিয়েছিলেন, ফ্রিজ নিয়ে এসেছিলেন। আম্মা সেই ফ্রিজটা বিক্রি করে দিলেন। আমাদের বললেন, ঠাণ্ডা পানি খেলে অসুখ হয়, সর্দি-কাশি হয়, গলাব্যথা হয়। ঠাণ্ডা পানি খাওয়া ঠিক না। তাই বিক্রি করে দেই।
এমন দিনও গেছে, হয়তো বাজার করতে পারেননি। আমাদের কিন্তু কখনো বলেননি, টাকা নেই বাজার করতে পারলাম না। চালডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে সঙ্গে আচার দিয়ে বলেছেন, প্রত্যেকদিন ভাত ভালো লাগে নাকি? এসো, আজ আমরা গরীব খিচুড়ি খাবো। এটা খেতে খুব মজা।’
– এমনই ছিলেন শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, যিনি নিভৃতে থেকে প্রেরণা জুগিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকে, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে স্বাধীনতা সংগ্রামে দিয়েছেন দিক নির্দেশনা। জাতির জনকের সমস্ত কর্মকাণ্ডে নীরবে জড়িয়ে থাকা বেগম মুজিব মরণেও সাথী হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর।
বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৮৬তম জন্মবার্ষিকীতে আবেগ আপ্লুত প্রধানমন্ত্রীর সমস্ত বক্তব্যই ছিল মায়ের সাথে স্মৃতিকে ঘিরে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করে বলেন, একজন আম্মাকে বললেন, আপনি এটা কী করলেন ভাবী? আপনি তো বিধবা হবেন। আমার মা বলেছিলেন, আমি তো একা না। এখানে ৩৪ জন আসামী। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩৫ জন আসামীর ৩৪ জনই তো বিবাহিত। তাদের কথা চিন্তা করতে হবে না? মামলা তুলে না নিলে বঙ্গবন্ধু (তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে আলোচনায়) যাবেন না।’
তিনি বলেন, বেগম মুজিবের রাজনৈতিক দূরদর্শিতাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছে। কেননা সেদিন বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি পেয়ে আলোচনার জন্য জন্য গেলে আর কখনোই বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেত না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম মুজিব যেমন ছিলেন সাহসী তেমনি দৃঢ়চেতা। বঙ্গবন্ধুর মতো এই দেশকে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল তারও। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয়, এভাবে বেঁচে থাকাটা যে কী কষ্টের, যারা আপনজন হারায় শুধু তারাই বোঝে।’ বাবা-মায়ের অসমাপ্ত কাজ যেন সম্পন্ন করতে পারেন সেজন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চান।
সবাইকে বেগম মুজিবের আদর্শে চলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।