চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

বাঙালির সব অর্জনেই রয়েছে ছাত্রলীগের অবদান: প্রধানমন্ত্রী

ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

KSRM

বাঙালির এখন পর্যন্ত যত অর্জন সব কিছুতেই ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: ছাত্রলীগকে তার ঐতিহ্য মেনে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সততার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই দেশর উন্নতিতে ছাত্রলীগের একজন নেতা-কর্মী অবদান রাখতে পারবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেই নেতা হতে হয় বলে উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

শুক্রবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

Bkash July

ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বাছাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন: আমি চাই সমঝোতার মধ্যদিয়ে তোমরা তোমাদের নেতৃত্ব বাছাই কর। এখনই ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। এছাড়া, বর্তমান কমিটির মেয়াদ ৯ মাস বেশি হয়ে যাওয়ায় ২৭ বছরের পরিবর্তে ২৮ বছর পর্যন্ত যে কেউ নেতৃত্বে আসতে পারবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন: আমার বাবা এদেশের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমরা ভাগ্য গড়তে আসেনি, সম্পদও গড়তে আসেনি। সততার সঙ্গে রাজনীতি করেছি। তাই বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করতে পেরেছিলাম। সততার সঙ্গে ছিলাম বলেই বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলাম: তোমরা প্রমাণ করো দুর্নীতি হয়েছে। আমি আরও বলেছিলাম, আমরা আমাদের অর্থেই পদ্মা সেতু করবো। কত মানুষ টাকা পাঠিয়েছে বিদেশ থেকে। বলেছে, আপা আপনি করেন যা লাগে আমরা দেবো। এটা কেনো হয়েছে।  সততার সঙ্গে রাজনীতি করেছি বলেই সম্ভব হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সততার সঙ্গে রাজনীতি করার নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এ সাংগঠনিক নেতা।

Reneta June

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ এবং ছাত্র আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন তিনি বলেন:কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন ভ্যান্ডালিজম চলবে না। এটা কোন ভাবেই আমি সহ্য করবো না। প্রচুর টাকা ঢেলে আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন করেছি। সেই উন্নয়ন ধ্বংস কোন ভাবেই আমি মেনে নিবো না। আমার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছে, তারা ব্যবস্থা নেবে।

ভিসির বাড়িতে হামলার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের কোনভাবে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারী দেন তিনি। এছাড়া, শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষকের দ্বন্দ্বের মাঝে ছাত্রদের টেনে এনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ খারাপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘আমাদের কিছু কিছু নেতারা বিএনপিতে চলে গেছে। এরা বেঈমান মুনাফেক। এরা রাজনীতিতে কিছু দিতে পারবে না। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। জাতির পিতার হত্যার বিচার না করে জিয়াউর রহমান তাদের বড় বড় পদে বসিয়েছিলো; আর ওই খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ওই খুনিদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলো।

আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। দেশর প্রতিটি মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। জাতির পিতার যে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ রেখে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে স্বল্প উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গিয়েছি।  ১৭টি দেশকে পেছনে ফেলে আমরা এ অবস্থানে এসেছি। সারা বিশ্ব অবাক হয়েছে।

ছাত্রদের পড়াশুনা কিভাবে ভালো হবে না হবে সেটা আমরা দেখবো। আমাদের বয়স হয়েছে নিশ্চয় আমরা ভালো জানি। সেই ব্যবস্থা করছি। শিক্ষাকে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় নিয়ে এসেছি।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ প্রথম দিনে সফল না হওয়া প্রসঙ্গও আসে প্রধানমন্ত্রীর কথায়।  বলেন: মাত্র ৪৬ সেকেণ্ড বাকি তখন বন্ধ হয়ে গেলো। এটার কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি কারণ তুলে ধরেন।

‘আমরা যে আকাশও জয় করেছি, এটার জন্য কেউ যেনো মন খারাপ না করে। মন খারাপ আমারও হয়েছিলো। কিন্তু যেটা হয়েছে সেটা স্বাভাবিক।’

এর পাশাপাশি ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪ নির্বাচন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার, ৬৯’র গণ অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাঙালি জাতির প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বাঙালি জাতির দাবি আদায়ে ছাত্রলীগের ভূমিকা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন: বাঙালির যতটুকু অর্জন সবকিছুতেই রয়েছে ছাত্রলীগের অবদান।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে বলেন: নতুন ভোটাররাই আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ট্রামকার্ড। এই ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অগ্রনী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

এর আগে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল চারটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থলে পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

পরে ছাত্রলীগের নেতাদেরকে নিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন শেখ হাসিনা। এরপর গাওয়া হয় জাতীয় সঙ্গীত। পরে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন ‍উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইনসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ২৯ তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়েই ঐহিত্যবাহী ছাত্র সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।

সম্মেলনের মাধ্যমে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবারের মধ্যে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য তিন শতাধিক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। শীর্ষ দুটি পদে সর্বশেষ সম্মেলনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলেও এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।

জানা গেছে, অন্তত দুই প্রজন্ম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এমন পরিবারের সন্তানদের এবং বিভিন্ন সময়ে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় মেধাবী ছাত্রদের হাতে এবার ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন