ভারতীয় সীমান্তের ভেতরে বাংলাদেশের ছিটমহলবাসীদের মধ্যে একজনকেও পওয়া যায়নি যারা বাংলাদেশে যেতে চায়। মাঠপর্যায়ে পরিচালিত জরিপে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জুলাইয়ের ৬ তারিখ থেকে যৌথ গণনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই মাঠ কর্মকর্তারা কয়েকটি জায়গায় জরিপের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ করেছে।
কোচবিহার জেলার ম্যাজিস্ট্রেট পি উলাগানাথান বলেছেন, একজন বাংলাদেশী এবং একজন ভারতীয় ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত এমন ৭৫টি দল মাঠ জরিপের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
‘এর মধ্যে ২৫ টি দল বাংলাদেশি ছিটমহলের কারা ভারতে আসতে চায় এটা জানতে এবং ৫০ টি গ্রুপ ভারতীয় ছিটমহলের কতজন বাংলাদেশে যেতে চায় এটা তা জরিপ কাজ পরিচালনা করছে। প্রতি ৫ টি দলের জন্য একজন সুপারভাইজর রয়েছেন।’ জানান উলাগানাথান।
তিনি বলেন, আমরা এখন প্রাপ্ত তথ্যগুলো সংকলনের প্রক্রিয়ায় রয়েছি। ১৬ জুলাই-এর পর জানা যাবে ঠিক কতজন অন্য দেশের নাগরিকত্ব চায় তার সঠিক সংখ্যা বলা সম্ভব হবে।
তবে এই পর্যন্ত কেউ বাংলাদেশে আসার ইচ্ছা জানায়নি বলে জানিয়েছেন ভুমি রেকর্ড বিভাগের কর্মকর্তা এবং একজন সুপারভাইজার উত্তম সরকার।
সীমান্তের আশেপাশে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কর্মকর্তারা জানিয়েছে প্রায় ১০০ টি পরিবার ভারতে আসার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
মাঠ কর্মীরা ছিটমহলের ভেতরে ক্যাম্প তৈরি করেছে যেখানে স্থানীয় অধিবাসিদের রেজিস্টার করতে বলা হয়েছে।
“আমরা তাদের সাধারণ কিছু প্রশ্ন করছি যেমন তাদের নাম, বয়স, পিতা-মাতার নাম, বর্তমান নাগরিকত্ব এবং ২০১৫, আগস্টের ১ তারিখের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় তারা যেই দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করতে চায়।” বলেন পোয়াটুরকুঠির ছিটমহলের কর্মকার্তদের একজন দিপক বাসাক।
পোয়াটুরকুঠি হলো সবচেয়ে বৃহৎ ছিটমহল যেখানে ৪৮৩ টি পরিবার বসবাস করে।
যারা বাংলাদেশে যেতে চায় তাদের নির্ধারিত ফর্মের ১১ নম্বর কলামে একটি ছবি দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একজনেরও ছবি নেওয়া হয়নি।
শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক যারা ক্যাম্পে আসতে অপারগ জরিপ কর্মীরা তাদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। একে খুবই আবেগপ্রবণ কাজ উল্লেখ করে অভিবাসিদের প্রতি সদয় আচরণ করতে হয় বলে জানান একজন কর্মকর্তা।
দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের নির্ধারিত দিন (জুলাই ৩১) খুব নিকটে চলে আসায় ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে জরিপ কাজ শেষ করতে হবে।
ভূমি হস্তান্তর দলিল অনুযায়ী বাংলাদেশের কাছে ভারত ১১১ টি ছিটমহল হস্তান্তর করবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভারতের কাছে হস্তান্তর করবে ৫১ টি ছিটমহল।
এই জনগণনাকে এক ‘মিথ্যা জীবন’ যাপনের সমাপ্তি হিসেবে মন্তব্য করেছেন আফান উল্লাহ মিয়া নামের একজন বাংলাদেশী ছিটমহল অধিবাসি।
তিনি বলেন, ভারতীয় নাগরিকের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আমি আমার চার পুত্র এবং কন্যার বিয়ে দিয়েছি।
ভারতে স্থানান্তরিত হওয়া মানুষদের থাকার জন্য দিনহাটা গ্রামে প্রায় ১.৫ একর ভূমি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় অনেক বাড়ি নির্মান করতে সময় লাগবে উল্লেখ করে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান তার আগ পর্যন্ত স্থানান্তরিত লোকজন অব্যবহৃত হিমাগার এবং একটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন গোডাউনে থাকার ব্যবস্থা করা হবে।
সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস