চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

এসএসসি পরীক্ষা ২০২১ প্রসঙ্গে কিছু কথা

অনেক আলোচনা, সমালোচনা, উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার পর অবশেষে সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা এল- নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে (যদি করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে)।

পরীক্ষা হবে শুধুমাত্র গ্রুপভিত্তিক ঐচ্ছিক বিষয়ের। ঘোষণা অনুযায়ী আবশ্যিক ও চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা হবে না। তবে, আবশ্যিক বিষয়ের ক্ষেত্রে জেএসসি থেকে বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও ধর্ম বিষয়ের ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ করে নম্বর কাউন্ট করা হবে।

Bkash July

এদিকে ঐচ্ছিক বিষয়ের উপর পরীক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি (ঐচ্ছিক) বিষয়ে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে আটটি করে মোট চব্বিশটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট সরবরাহ করবে শিক্ষামন্ত্রণালয়। গত ১৮ জুলাই থেকে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।

ইতিমধ্যে তিন সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করা হয়েছে। পরীক্ষার্থী-শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট স্কুল থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করে নির্ধারিত সময়ে স্কুলগুলোতে জমাও দিচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী নভেম্বরে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে এই বিষয়গুলোর জন্য পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

Reneta June

সাবজেক্ট ম্যাপিং, অ্যাসাইনমেন্ট এবং তিন বিষয়ের পাবলিক পরীক্ষার সমন্বিত রেজাল্টই হবে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের চূড়ান্ত রেজাল্ট। এই হল, আসন্ন এসিএসসি পরীক্ষা নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত।

এসএসসির মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি এ ঘোষণাটি ইতিমধ্যে ছাত্র,শিক্ষক, অভিভাবক ও সুধীমহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে মূল পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া, জেএসসিতে যারা এই বিষয়গুলোতে বিভিন্ন কারণে ভালো করতে পারেনি পরবর্তীতে তারা যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছে, তাদের ক্ষেত্রে সাবজেক্ট ম্যাপিং’র পদ্ধতিটি ন্যায্য হবে বলে অনেকেই মনে করছে না। এ ব্যাপারে অনেক শিক্ষার্থীই হতাশা প্রকাশ করছে, ক্ষোভ প্রকাশ করছে তাদের অভিভাবকরা।

এ প্রসঙ্গে আমার অভিমত:
প্রথমেই সরকারকে ধন্যবাদ দেব- করোনার অতিমারি-জনিত কারণে পরীক্ষা বাতিল করে ‘অটোপাশ’র মত একটি জটিল সিদ্ধান্ত জাতির ভবিষ্যত প্রজন্মের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। সীমিত পরিসরে হলেও শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা দিয়েই এসএসসি পাস করতে হবে।

পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল চলতি শিক্ষাবর্ষে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও ইতিবাচক একটি ঘটনা। তবে,পরীক্ষার বিষয় ও প্রস্তাবিত পরীক্ষা-পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা যায়। এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিমত তুলে ধরার প্রয়াস নেব….

১। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বিষয়ের নম্বর কমিয়ে (প্রয়োজনে অর্ধেক নম্বর) সবকটি বিষয়েই পরীক্ষা নেওয়া যেত। শুধুমাত্র নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার মাধ্যমেও মূল্যায়ন করা যেত।

২।পরীক্ষার সময়সূচি সংক্ষিপ্ত করে অল্প সময়ে পরীক্ষা শেষ করা সম্ভব। শুক্রবার ও সরকারি বিশেষ ছুটি ব্যাতিত সপ্তাহের প্রতিদিন পরীক্ষা নেওয়া যায়।

৩। চতুর্থ বিষয় বাদে আবশ্যিক ও ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের ব্যবহারিক পরীক্ষাও বাতিল করা যেতে পারে।

৪। পরীক্ষা কেন্দ্র সাময়িকভাবে বাড়ানো যেতে পারে। প্রয়োজনে পরীক্ষার্থীর স্ব স্ব স্কুলেই পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন।

উপরোক্ত প্রস্তাবনা যদি কোনমতেই সম্ভব না হয়, যদি চলমান সিদ্ধান্তই বহাল থাকে- তাহলে আরো একটি অভিমত সংযোজন করব…

১। সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত অ্যসাইনমেন্ট কার্যক্রমে পরীক্ষার্থীরা যাতে কোনরূপ অসদোপায় অবলম্বন করে না করতে পারে, সেজন্য ইউটিউবের এ সংক্রান্ত চ্যানেলগুলো দ্রুত ব্লক করে এদের পরিচালকদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

২। আবশ্যিক বিষয়ের সাবজেক্ট ম্যাপিং ধারণাটি বাতিল করে এই বিষয়গুলোর পরীক্ষা স্ব স্ব বিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হবে। স্কুল প্রশাসন পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরসহ উত্তরপত্রগুলো সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডে প্রেরণ করবে। এই পরীক্ষাগুলির সময়সূচি ও প্রশ্নপত্র শিক্ষাবোর্ড যোগান দেবে।

উপরোক্ত আলোচনা ও মতামত একান্তই আমার নিজস্ব। একজন শিক্ষক হিসেবে, একজন অভিভাবক হিসেবে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর আগামীদিনের পথপরিক্রমার কথা ভেবে এসএসসির মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পাবলিক পরীক্ষার ব্যাপারে আমার ভাবনা তুলে ধরলাম।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

ISCREEN
BSH
Bellow Post-Green View