
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগ অনুযায়ী নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা কমপক্ষে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করে বিদেশে পালিয়েছিলেন প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার। অবশ্য তিনি একা নন, তার এই কাজের সহযোগী আরও অসংখ্য মানুষ। এসব নিয়ে এখনো তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে দুদক। তবে আশার কথা হলো দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর থেকে পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
ভারত এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তাকে গ্রেপ্তারের আগের দিন অবৈধ সম্পত্তির খোঁজে বেশ কয়েকটি স্থানে একযোগে অভিযান চালায় ইডি। সেই অভিযানে নগদ অর্থসহ পিকে হালদার এবং তার সহযোগীদের নামে-বেনামে থাকবে বহু সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, তিনি নিজের নাম বদলে হয়ে যান শিবশঙ্কর। ভারতের নাগরিক সুবিধা দেয়- আধার কার্ড, রেশন কার্ডসহ এমন একাধিক নথিও তৈরি করে ফেলেন।
বাংলাদেশ সরকারের অনেকগুলো সংস্থা ধারণা করেছিল, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক কানাডায় পালিয়ে গেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানা গেল পিকে হালদার প্রতিবেশী দেশেই আরাম-আয়েশের সঙ্গে দিনপাত করছেন। আবার নতুন নতুন ব্যবসাও খুলে বসেছেন। গাড়ি-বাড়ি-জমি সবই কিনেছেন।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর ভারতের আইন অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপের কাজ শুরু করেছে ইডি। এরই মধ্যে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ, সেদেশে বসবাস, বেনামে সম্পত্তি কেনা এবং আইনবহির্ভূতভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অর্থ আনার মতো গুরুতর সব অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

আগের কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধারণা করা হচ্ছে, ভারতে পিকে হালদারের বিচার হওয়ার পর তাকে বাংলাদেশে ফেরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। এরই মধ্যে দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে ৩ থেকে ৬ মাস সময় লেগে যেতে পারে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলছেন, পিকে হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি ভারত এখানো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। সেটা করলে তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এটা ঠিক বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনতে বহিঃসমর্পণ চুক্তি আছে। সেই চুক্তির মাধ্যমে তাকে দ্রুত ফিরিয়ে আনতেই হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। কেননা এত বিশাল আকারের দুর্নীতিতে পিকে হালদার একা নয়, আরও বড় বড় রাঘববোয়ালরাও জড়িত। কারা, কিভাবে এটা করেছে; তা জানতেই হবে।
আমরা শুধু পিকে হালদার বা তার সহযোগীদের দুর্নীতির কথা বলছি না। একইভাবে কানাডার বেগমপাড়া, আমেরিকা, ইউরোপ, এমনকি বিশ্বের অন্যান্য দেশে যারা টাকা পাচার করেছে; তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি। এমন অসংখ্য পিকে হালদার দেশের টাকা লুট করেছে।
আমরা মনে করি, এই ধরনের অপরাধীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে তা অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। নিশ্চিত করে বলা যাবে- অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না। শাস্তি পেতেই হয়।