পথের ধারে বন্ধুর কোলে ঢলে পড়েছেন এক অসুস্থ যুবক। অসহায় বন্ধু সাহায্য চাইছেন আশপাশের মানুষের কাছে। কিন্তু কেউই তা শুনছে না। এমনই এক ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। ভারতের এই ছবিতে অন্য রাজ্যে কাজ করা শ্রমিকদের দুরাবস্থার চিত্র আরো একবার প্রকট হয়ে উঠেছে সবার চোখের সামনে।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের শিবপুরী জেলায় রাস্তার ধারে দেখা গিয়েছে এই হৃদয় বিদারক দৃশ্য। ওই যুবক ও তার বন্ধু দু’জনেই ভিন রাজ্যে কাজ করা শ্রমিক।
প্রচণ্ড তাপদাহে শেষ পর্যন্ত এক হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ওই অসুস্থ শ্রমিকের। প্রাণ হারানো শ্রমিকের নাম অমৃত। তিনি সুরাতে এক পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বস্তিতে। কাজ হারিয়ে গুজরাট থেকে উত্তরপ্রদেশে ফিরতে এক ট্রাকে উঠেছিলেন শ্রমিকদের একটি দলের সঙ্গে।
ইন্দোরগামী ওই ট্রাকের পিছনে দাঁড়ানোর জায়গার জন্য ৪,০০০ টাকা নেওয়া হয় তার কাছ থেকে। কিন্তু পথে যেতে যেতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর শিবপুরীতে তাকে ট্রাক থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। অন্যরা কেউই তার সঙ্গে থাকেননি। কেবলমাত্র বন্ধু ইয়াকুব তার সঙ্গে ট্রাক থেকে নেমে যান।

ছবিতে দেখা যায়, ইয়াকুব পথের ধারে বন্ধু অমৃতকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। সবার কাছে সাহায্য চাইছেন তিনি। কিন্তু কেউ শুনছেন না। এক স্থানীয় বাসিন্দা এমন মর্মস্পর্শী দৃশ্যের ছবি তুলে রাখেন।
শিবপুরীর এক চিকিৎসক জানান, অমৃতের প্রচণ্ড জ্বর ছিল। সেই সঙ্গে বমি। তাপদাহে আক্রান্ত হলে এই ধরনের সমস্যা হয়। তবে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল এলে বিষয়টি পুরোপুরি পরিষ্কার হবে।
ইয়াকুবকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে এক জেলা হাসপাতালে। তার পরীক্ষার ফলাফল এখনও পাওয়া যায়নি।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউনের কারণে চাকরি হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ অন্য রাজ্যে কাজ করা শ্রমিক। রাতারাতি রোজগার, বাসস্থান হারিয়ে ফেলার পর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে চেষ্টা করেন তারা। বাড়ি ফেরার পথে অনেকেই বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
কিন্তু এসব শ্রমিকদের যেন সরকার থেকে খাদ্য সরবরাহ করা হয় সেই বিষয়ে জমা পড়া এক পিটিশন শুক্রবার নাকচ করে দেয় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়ে দেয়, কে হাঁটছে, কে হাঁটছে না সেটা আদালতের পক্ষে পর্যবেক্ষণে রাখা অসম্ভব।
শুনানিতে আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজ্য সিদ্ধান্ত নেবে। আদালত কেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে?
এর আগে গত ৮ মে লকডাউনের কারণে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে শ্রমিকদের একটি দল মহারাষ্ট্রের একটি রেললাইনে ঘুমিয়ে পড়ে। পরে একটি মালগাড়ি চলে যায় তাদের ওপর দিয়ে। সেখানে ১৬ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
পরে ১০ মে লকডাউনের মধ্যে ট্রাকে করে বাড়ি ফেরার সময় ট্রাক উল্টে প্রাণ হারায় আরো ৫ শ্রমিক। ১৬ মে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারায় ২৪ শ্রমিক।