একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রাণ দিয়েছেন এমন অনেক শহীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শহীদ আজাদ। আজ (শনিবার) সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী।
‘কতদিন ভাত খাই না মা, আমার জন্য ভাত নিয়ে এসো’ -৭১’এ হানাদার বাহিনীর হাতে আটক ক্র্যাক-প্লাটুনের বীর গেরিলাযোদ্ধা আজাদ ভাত খেতে চেয়েছিলেন মায়ের কাছে। কথা মতো মা ভাত নিয়েও এসেছিলেন। তবে ছেলেকে আর পারেননি।
সেই থেকে অপেক্ষা করেছিলেন আজাদের মা, এই বুঝি ফিরে এসে ভাত চাইবে তার ছেলে। না, আর ফেরেননি আজাদ। তাই মা-ও আর কোনো দিন ভাত মুখে তোলেননি। ১৪ বছর একবেলা রুটি খেয়ে থেকেছেন মা। ঘুমিয়েছেন মেঝেতে। কারণ ছেলে যে তার শুয়ে ছিলো নাখালপাড়ার ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এম.পি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলের মেঝেতে।
১৯৮৫ সালের ৩০ আগস্ট না ফেরার দেশে চলে যান শহীদ আজাদের মা। তাঁর কবরের নাম ফলকে নাম-পরিচয়ের জায়গায় লেখা হয় ‘শহীদ আজাদের মা’।
আজাদের ধরা পড়ার দিনটিও ছিলো ৩০ আগস্ট। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করেন টগবগে তরুণ আজাদ। দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। আজাদের বন্ধু রুমী, হাবিবুল আলম বদি, জুয়েলরা গেরিলা অপারেশনে অংশ নিচ্ছেন আগরতলা থেকে ফিরে এসে। আজাদ তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন।
আজাদদের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নিলো। অস্ত্র লুকিয়ে রাখলো। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট আজাদদের বাড়ি পাকিস্তানি সৈন্যরা ঘিরে ফেলে। মানবতাবিরোধী অপরাধী আল-বদর প্রধান মুজাহিদ এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেয়ার নেপথ্যে ছিলো বলে জানা যায়।
পাকিস্তানি বাহিনী বাড়িটি ঘিরে ফেলার পর গোলাগুলি শুরু হয়। আজাদসহ মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি মিলিটারি।
আটকের পর আজাদকে রমনা থানায় রাখা হয়। আজাদের মাকে জানানো হয়, আজাদ রাজসাক্ষী হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। মা দেখা করেন ছেলের সঙ্গে।
তাকে বলেন, ‘শক্ত হয়ে থেকো বাবা, কোনো কিছু স্বীকার করবে না’। তখনই আজাদ তার মাকে বলেন, মা কয়েকদিন ভাত খাই না। আমার জন্য একটু ভাত এনো।
এটাই ছিলো মায়ের সাথে আজাদের শেষ কথা, শেষ দেখা। তারপর থেকে ছেলের জন্য ভাত নিয়ে আজাদের মায়ের দীর্ঘ প্রতীক্ষার শুরু।
আনিসুল হক তার ‘মা’ উপন্যাসে তুলে ধরেছেন আজাদ ও তার মায়ের আত্মত্যাগ । সত্য ঘটনা। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের “একাত্তরের দিনগুলি” গ্রন্থ থেকেও শহীদ আজাদ ও তার মায়ের কথা জানা যায়।