আগামী বছরের মার্চে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কথা স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারের। অস্ট্রেলিয়রা চাচ্ছিল, তারা দু’জনই যেন বিশ্বকাপ খেলেন। কিন্তু সমস্যা ছিল, বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার আর কোনো খেলা ছিল না। অবশেষে সেই দুয়ারটা খুলছে বলে মনে হচ্ছে।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) প্রস্তাব দিয়েছে, তারা তাদের সামনের সিরিজটা এপ্রিল মাসে খেলতে চায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই। এই সিরিজটা সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়ার কথা ছিল মার্চে। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে আগে অনুশীলন ভালো করার জন্য পিসিবি এটা এপ্রিলে করতে চাচ্ছে। আর তেমনটা বাস্তবে হলে দরজা খুলে যাবে স্মিথ ও ওয়ার্নারের জন্য। পিসিবি অবশ্য এই ওয়ানডে সিরিজের অন্তত একটা ম্যাচ পাকিস্তানে আয়োজনের প্রস্তাবও করেছে।
এতো গেল স্মিথ-ওয়ার্নারের বিশ্বকাপ প্রস্তুতির কথা। এই খবরের আগেই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে জল্পনা শুরু হয় তাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে। তাতে শোনা যাচ্ছিল, চলতি সপ্তাহেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে স্মিথ-ওয়ার্নারের। আর ভারতের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই আবার মাঠে নামতে পারেন নিষিদ্ধ অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক।
কিন্তু না, শাস্তির পুরো মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিন ‘পাপী’কে দলে ফেরাচ্ছে না অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) পক্ষ থেকে এমনটা পরিস্কারভাবেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারই সভায় বসেছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড। সেখানে স্মিথ-ওয়ার্নারের সঙ্গে আরেক নিষিদ্ধ ক্রিকেটার ক্যামেরন বেনক্রফটের শান্তির মেয়াদ কমানোর দাবি পেশ করেছিল অস্ট্রেলিয়ার ‘প্লেয়ার্স ইউনিয়ন’। কিন্তু রিভিউ শেষে সেই আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, তিন ক্রিকেটারকেই শাস্তির পূর্ণ মেয়াদ ভোগ করতে হবে।
সিএ’র অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান আর্ল এডিংস বলেছেন, ‘তিন ক্রিকেটারের শাস্তি কমানোটা মোটেই যথাযথ নয়, বোর্ড এই ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
চলতি বছরের শুরুতে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে জোহান্সবার্গ টেস্টের সময় বল টেম্পারিংয়ের দায়ে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন তৎকালীন অধিনায়ক স্মিথ ও সহ-অধিনায়ক ওয়ার্নার। তাদের সঙ্গে নয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় ব্যাটসম্যান বেনক্রফটকে। ইতিমধ্যে শান্তির মেয়াদ আটমাস শেষ করেছেন স্মিথ-ওয়ার্নার। আর নয় মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ডিসেম্বরে ফিরছেন বেনক্রফটও।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারস অ্যাসোসিয়েশন যুক্তি দিয়েছিল, স্বাধীনভাবে পর্যালোচনা করে তিন ক্রিকেটারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হোক। কিন্তু সিএ চেয়ারম্যান বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত।
তিনি বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এবং প্রকৃতি উভয়ই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের খ্যাতি এবং বিদেশে তাদের উল্লেখযোগ্য প্রভাবের আলোকে যথাযথ প্রতিক্রিয়া হিসাবে রয়ে গেছে। স্মিথ, ওয়ার্নার এবং বেনক্রফট ক্রিকেটের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন এবং তাদের প্রত্যাবর্তনের পথ নিশ্চিত করার পক্ষে আমাদের ক্রমাগত সমর্থন রয়েছে।’
সাম্প্রতিক খারাপ পারফরম্যান্সে জন্য তিন ক্রিকেটারকে, বিশেষ করে স্মিথ-ওয়ার্নারকে দলে ফেরাতে পরিচালনা পর্ষদের উপর ব্যাপক চাপ রয়েছে। বেশ কয়েকজন সাবেক হেভিওয়েট তারকাও তাদের দলে ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
এর বিপরীতে অবশ্য অন্যরা যুক্তি দিয়েছেন যে, তাদের নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকা উচিত। কারণ তিনজন খেলোয়াড়ই নিজেদের নিষেধাজ্ঞা স্বীকার করে নিয়েছেন।
তবে এডিংস বলছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি নিষেধাজ্ঞা কমানোর যে কথোপকথন চলছে তা তিন খেলোয়াড়ের উপর চাপ সৃষ্টি করবে-যাদের প্রত্যেকেই এই বছরের শুরুতে নিষেধাজ্ঞা স্বীকার করে নিয়েছেন এবং অস্ট্রেলিয়ান পুরুষ ক্রিকেট দলও সেটা মেনে নিয়েছে। সুতরাং, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডও নিষেধাজ্ঞা সংশোধনের জন্য আর কোনো দাবি বিবেচনা করতে চায় না।’
এর আগে সিডনির এথিকস সেন্টারের স্বাধীন এক রিপোর্টে বল টেম্পারিং নিয়ে উঠে আসে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ভয়ঙ্কর সব তথ্য। তাতে বলা হয়, অহংকার এবং প্রতিপক্ষকে সবসময় দমিয়ে রাখার প্রবণতা; এ দুই কু-মানসিকতায় দিন দিন বিপথে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট।
বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির পর টালমাতাল হয়ে উঠে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট। তিন ক্রিকেটারকে নিষিদ্ধ করার পর পদত্যাগের হিড়িক লেগে যায় অজি ক্রিকেট বোর্ডে। তাতে সবশেষ যুক্ত হন মার্ক টেলর। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ডিরেক্টরের পদ থেকে সরে দাঁড়ান সাবেক এই অধিনায়ক। তার আগে সরে দাঁড়ান সিএ’র প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড ও চেয়ারম্যান ডেভিড পিভার।