প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই হিলারি ক্লিনটনের অবস্থানকে ধ্বংস করে দেয়ার মতো তথ্য পাওয়ার আশায় ক্রেমলিনের সঙ্গে যুক্ত এক রুশ আইনজীবীর সঙ্গে গত বছর দেখা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে তিনি এ কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি।
তবে এমন তথ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেও ন্যাটালিয়া ভেসেলনিটস্কায়া নামের ওই আইনজীবী শেষ পর্যন্ত হিলারি সম্পর্কে কোনো কাজের তথ্যই দিতে পারেননি বলেও জানান ট্রাম্প জুনিয়র।
রুশ আইনজীবীর সঙ্গে ওই বৈঠকে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং ট্রাম্প শিবিরের নির্বাচনী প্রচারণা প্রধান পল জে ম্যানাফোর্টও ছিলেন বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ট্রাম্প জুনিয়র জানান, ন্যাটালিয়া ভেসেলনিটস্কায়ার সঙ্গে বৈঠকটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ৯ জুন নিউইয়র্কে অবস্থিত ট্রাম্প টাওয়ারে। এর মাত্র দু’সপ্তাহ আগেই রিপাবলিকান দলের মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থান শক্ত করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্পের একেবারে কাছের লোকদের কারও সঙ্গে একজন রুশ ব্যক্তির এটাই প্রথম নিশ্চিত গোপন বৈঠক।
নিউইয়র্ক টাইমস প্রথম এ সাক্ষাতের ব্যাপারে রিপোর্ট প্রকাশ করে গত শনিবার। কিন্তু তখন বলা হয়, ট্রাম্প জুনিয়র এবং ভেসেলনিটস্কায়া দেখা করার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বলেছেন, ওই বৈঠকে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
কিন্তু রোববার পত্রিকাটি আরেকটি প্রতিবেদনে জানায়, ট্রাম্পপুত্র তার কথা পরিষ্কার করেছেন। তিনি তখনই ওই আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়েছেন, যখন তাকে বলা হয়েছে ভেসেলনিটস্কায়া এমন তথ্য দেবেন, যা ডেমোক্রেটিক দলের ওই সময়কার প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের জন্য ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হবে।
নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, তিনজন হোয়াইট হাউজ উপদেষ্টা বৈঠকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এবং আরও দুই উপদেষ্টা এ ব্যাপারে জানতেন।
সংবাদটি প্রকাশের পর রোববার ট্রাম্প জুনিয়র এক বিবৃতিতে জানান, এক পরিচিত ব্যক্তি তাকে জানিয়েছিলেন এমন একজন ব্যক্তির কথা, যিনি প্রচারণায় কাজে আসবে এমন তথ্য দিতে পারবেন। তবে দেখা করার আগ পর্যন্ত তিনি ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানতেন না।
‘আমি জ্যারেড এবং পলকেও আমার সঙ্গে বৈঠকে থাকতে বলি, কিন্তু কী নিয়ে বৈঠক তা আগে জানাইনি,’ বিবৃতিতে বলেন জুনিয়র, ‘কুশল বিনিময়ের পর ওই মহিলা বলেন, তার কাছে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য আছে, যারা ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটিকে অর্থায়ন এবং ক্লিনটনকে সমর্থন করছেন।’
‘কিন্তু তার বক্তব্যগুলো ছিল অস্পষ্ট, দ্ব্যার্থবোধক এবং অর্থহীন। কথাগুলোকে সমর্থনকারী কোনো প্রমাণও দিতে পারেননি তিনি, দেয়ার চেষ্টাও করেননি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যায়, তার কাছে কাজের কোনো তথ্য নেই,’ বলেন জুনিয়র।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এবং কংগ্রেসের একটি কমিটি অনেকটা সময় ধরেই গত ৮ নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি তদন্ত করছে। এ অভিযোগের পক্ষে বিপক্ষে বহু অভিমত এবং বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়েছে। চাকরি হারিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন এবং এফবিআই ফ্রধান জেমস কোমির মতো পদাধিকারী ব্যক্তিরাও।
যেখানে চলমান নতুন তদন্তে ট্রাম্প জামাতা কাশনারও তদন্তের আওতায় চলে এসেছেন, সেখানে এর মাঝেই ট্রাম্পপুত্র এমন একটি তথ্য প্রকাশ করায় তদন্তের নতুন আরেকটি দিক খুলে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।