দেশের দুইটি এলাকায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর দুটি শিশু হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হলো একই দিনে। পৃথক দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ৬ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। সিলেটে চাঞ্চল্যকর রাজন হত্যা মামলায় চারজনের এবং খুলনায় শিশু রাকিব হত্যা মামলায় দুইজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।
রাজন হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন কামরুল, তাজউদ্দিন বাদল, ময়না মিয়া ও জাকির হোসেন। এছাড়া আরেক আসামী নুর মিয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ মুহিত, আলী হায়দার ও শামীমের ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রুহুল আমিন, আছমত ফিরোজ ও আয়াজ আলী খালাস পেয়েছেন। বেলা ১২টার পরে আসামীদের এজলাসে তোলার পরে এ আদেশ দেন বিজ্ঞ বিচারক আকবর হোসেন মৃধা।
খুলনায় শিশু রাকিব হত্যার ঘটনায় শরীফ ও মিন্টু খানের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। রাকিব হত্যা মামলার আরেক আসামী শরীফের মা বিউটি বেগমকে খালাস দেন আদালত। রবিবার দুপুরে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলরুবা সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে ছিল উৎসুক মানুষের উপচেপড়া ভীড়। এ রায়ে রাষ্টপক্ষ ও রাকিবের পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করলেও আসামীপক্ষ রায়কে আবেগতাড়িত উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তবে বিউটি বেগম খালাস পাওয়ায় রাকিবের মা এবং এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর দ্রুততম সময়ে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় হওয়ায় এটি একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীসহ মানবাধিকার কর্মীরা।
রাজন হত্যার আসামীদের ফাঁসির দাবিতে সিলেটের আদালত প্রাঙ্গনে জনতার ঢল নামে। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাজনের বাবা-মা সহ আত্মীয়-স্বজন, সাধারণ মানুষ। অসংখ্য মানুষ আদালতে উপস্থিত হয়ে ফাঁসি ফাঁসি স্লোগানে আদালত প্রাঙ্গণ উচ্চকিত করে তুলছিলেন। ফাঁসির আদেশ শোনার পরে তারা উল্লাসে ফেঁটে পড়েন।

১৪ ও ১০ কার্যদিবসে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে আলোচিত মামলা দু’টির রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ঠিক করেন সিলেট ও খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত।
সিলেটে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার সাক্ষগ্রহণ শেষে ৮ নভেম্বর রায় প্রদানের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত। এর আগে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটির কার্যক্রম শুরুর পর দুইদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।
রাজন হত্যার ঘটনার পরপরই দেশ থেকে পালিয়ে যায় মামলার প্রধান আসামী কামরুল। পরে সৌদি আরব সফরে থাকা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহযোগিতায় তাকে জেদ্দায় আটক করা হয় ১৩ জুলাই। মামলার ১৩ আসামীর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ফেরত নিয়ে আসা প্রধান আসামী কামরুলসহ ১১ আসামী আটক থাকলেও পলাতক ২ আসামী।
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয় ১৩ বছরের শিশু সামিউল আলম রাজনকে। সেই নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তা আলোচনার সৃষ্টি করে। পিটিয়ে হত্যার ভিডিও চিত্রে দেখা দেখা যায়, শিশুটি বাঁধা অবস্থায় পানি চাইলে তাকে ঘাম খেতে বলা হয়। শেখ সামিউল আলম রাজন সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। সিলেটের কুমারগাঁও উপজেলার বাস স্টেশন এলাকার সুন্দর আলি মার্কেটের সামনে নির্মম হত্যার ঘটনাটি ঘটে।
গত ৩ আগস্ট খুলনা মহানগরীর টুটুপাড়া সেন্ট্রাল রোডে শরীফ মটরসে কম্প্রেসার মেশিন দিয়ে রাকিবরে শরীরে হওয়া ঢুকিয়ে এবং নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গ্যারেজ মালিক শরীফ, তার মা বিউটি বেগম এবং কর্মচারী মিন্টুকে আসামি করে রাকিবের বাবা নূর আলম খুলনা সদর থানায় ৪ আগস্ট মামলা দায়ের করে। পুলিশ ওই তিন আসামিকে গ্রেফতার করে।
আটক ৩ জনই ১৬৪ ধারায় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেয়। পুলিশ ২২ সেপ্টেম্বর তিনজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ জমা দেয়। পুলিশ তদন্ত শেষে গত ২৫ আগষ্ট আদালতে আটক তিন আসামীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করার পর ১০ কার্য দিবসে ৩৮জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে রবিবার বিচারক দিলরুবা সুলতানা মামলার রায় ঘোষণা করেন।