প্রতি বছরের জুলাই মাসে আলোকসজ্জা আর লোকে-লোকারণ্য থাকে কানাডার আলবার্টার ক্যালগেরি শহর। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী স্টাম্পিড ইভেন্টে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকেরা হাজির হয়। কাউবয় খ্যাত এই শহরটি মেতে ওঠে তার নিজস্ব অবয়বে। পরিপূর্ণ থাকে ক্যালগেরির হোটেলের সিটগুলো।
প্রাণের স্পন্দন আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের লোকে-লোকারণ্য মিলনমেলার এক কেন্দ্রবিন্দুতে যোগ দেয় প্রবাসী বাঙালিরাও। মাল্টিকালচারালিজমের কানাডার বিভিন্ন কমিউনিটির বিভিন্ন কালচার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় এই ইভেন্টে। কিন্তু এ বছর ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস স্তব্ধ করে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে সেই সাথে ক্যালগেরির স্টাম্পিডকে করেছে জনশূন্য।
সাধারণত মিডওয়ে গেমস, ঘোড়াদৌড়, অদ্ভুত এবং সুস্বাদু খাবার, লাইভ মিউজিক এবং স্থানীয় দর্শক ছোট ছোট শিশু কিশোরদের বিভিন্ন রাইড এবং বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের দ্বারা ভরা স্টলগুলি এ বছর ছিল নির্জন ও শান্ত ।
১০৮তম ক্যালগেরি স্টাম্পিডের স্থানীয় দর্শনার্থীদের জন্য আতশবাজির ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু সেটা ছিল সেখানে উপস্থিত না হয়ে উপভোগ করার জন্য।
কোভিড-১৯ এর প্রাক্কালে এপ্রিল মাসে ক্যালগেরি স্টাম্পিড বাতিল করা হয়। বাতিল ঘোষণার পর থেকে ক্যালগেরি স্টাম্পিড পরিচালনা পর্ষদ নগরীকে চাঙ্গা রাখতে ‘কমিউনিটির চেতনা বাতিল হতে পারে না’ এই লক্ষ্যে কাজ করতে থাকে।
ক্যালগেরির স্থানীয় গণমাধ্যম ‘ক্যালগেরি হেরাল্ড’ জানিয়েছে প্রতি বছর, ১০ দিনের ইভেন্টে স্টাম্পিড স্থানীয় ও প্রাদেশিক অর্থনীতিকে অগণিত বাণিজ্য অনুষ্ঠান, বিবাহ এবং কনসার্টের মাধ্যমে ৫৪০ মিলিয়ন ডলার দেয় যা স্টাম্পিড মাঠে ব্যয় করা হয়।
‘তাৎক্ষণিকভাবে (বাতিল করার পরে), আমরা কীভাবে একটি স্টাম্পিড স্পিরিট এবং কমিউনিটি স্পিরিট বজায় রাখার বিষয়ে ভাবব তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল,’ স্টাম্পিড বোর্ডের সভাপতি ডানা পিয়ার্স বলেছিলেন, এই জুলাইতে ক্যালগেরিতে একটি শূন্যতা থাকবে।
ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহযোগী ডীন, ইলেকট্রিকাল এন্ড কমপিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের
প্রফেসর ডঃ আনিস হক বললেন, স্ট্যাম্পিড ব্রেকফাস্ট ক্যালগেরিবাসীদের এক বিশেষ আকর্ষণ। শহরের ছোট বড় বিভিন্ন জায়গাতে ভোরবেলা থেকে দীর্ঘ লাইন শুরু হয়। প্রাদেশিক সরকার প্রধান থেকে শুরু করে, সিটি মেয়র, এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শহরের বিভিন্ন স্থানে নিজ হাতে এই ব্রেকফাস্ট জনগণকে পরিবেশন করেন। কোন কোন স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করতে হয়। ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান স্টাম্পিড ব্রেকফাস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নিজে পরিবেশন করেন। এবারে ভীষণভাবে মিস করছি জমজমাট কাউবয় পরিবেশে আধা কিলোমিটার লাইনে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ব্রেকফাস্ট।
বিশিষ্ট কলামিস্ট আব্দুল্লা রফিক বলেন, এ বছর করোনার প্রাদুর্ভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শো ক্যালগেরি স্টাম্পিড হচ্ছে না, যা ক্যালগেরিবাসীর জন্যে বেদনাদায়ক ঘটনা। যেখানে এই সময় সারা পৃথিবী থেকে কাউবয়দের আনাগোনায় পুরো শহর মুখরিত থাকার কথা সেখানে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা।
১৯১২ সাল থেকে শুরু হয়ে চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। ২০২০ সালের স্টাম্পিড না হওয়া এর ইতিহাসে প্রথম। মেনে নেয়া খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশাকরি আগামী বছর পূর্ণ উদ্যমে আবারো স্টাম্পিড ফিরবে।
ক্যালগেরির স্থানীয় নীতিনির্ধারক এবং বিশ্লেষকরা মনে করেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ বেঁচে থাকা।