বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেও বাংলাদেশের রেমিট্যান্স গড়েছে একের পর এক রেকর্ড। দেশের ইতিহাসে এক মাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে অক্টোবরে। এই সময় প্রবাসীরা মোট ২১১ কোটি ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
রোববার অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল চলতি বছরের জুলাইয়ে। ওই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে।
অর্থমন্ত্রণালয় বলছে, সদ্য বিদায়ী অক্টোবর মাসেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ সময় তারা পাঠিয়েছেন ২১১ কোটি ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ কোটি ডলার বেশি। ওই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।
অর্থমন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই ৪ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৮৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের একই সময় রেমিট্যান্স এসছিল ৬১৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এই ৪ মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।
রেমিট্যান্সের উপর ভর করে উল্লেখিত সময়ে রেকর্ড হয়েছে রিজার্ভেও। বর্তমানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ৪১ বিলিয়ন ডলার ৫ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময় ছিল ৩২ বিলিয়ন ৪৩ কোটি ৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ এই এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়েছে ৮ বিলিয়ন ৫৬ কোটি ৭ লাখ ডলার।
বিশ্বব্যাংকও বলেছে, বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। সংস্থাটি, গত ২৯ অক্টোবর ওয়াশিংটনে ‘কোভিড-১৯ ক্রাইসিস থ্রু এ মাইগ্রেশন লেন্স’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ ধারণা দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে এবং এ বছর প্রবাসী আয় আহরণে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে থাকবে। চলতি বছর বাংলাদেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আরও ৮ শতাংশ বাড়বে। বাংলাদেশে চলতি বছর রেমিট্যান্স প্রবাহের পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ বিলিয়ন ডলার।
রেমিট্যান্সের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, যারা কষ্ট করে অর্থ পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে চালকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, পুরো দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাস যখন অসাধারন এবং অবিশ্বাস্য গতিতে রেমিট্যান্স অর্জিত হচ্ছিল, তখন অনেকেই বলতে শুরু করলেন এগুলো ঠিক নয়। রেমিট্যান্সের এই ইতিবাচক ধারা থাকবেনা। অর্থাৎ টেকসই নয়। কর্মীরা তাদের কাজকর্ম বা ব্যবসা গুটিয়ে দেশে ফিরে আসছেন। এছাড়াও বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। সেসব লোকদের সাথে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও তাল মিলিয়ে বলতে শুরু করল এ প্রবাহ ঠিক নয়, টেকসই হবেনা।
কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয়, দেশের মানুষ সর্বশক্তি নিয়োগ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ নিজেদের পরিবারের জন্য পাঠাচ্ছেন। যা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। সেসব মানুষের মূল্যায়ণ না করে, তাদেরকে উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলে অনুপ্রাণিত করার বদলে আমরা নিরুৎসাহিত করতে শুরু করলাম কীভাবে!
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বব্যাংককে আমাদের এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কষ্টের স্বীকৃতি দিতে তাদের বার্ষিক সভায় অনুরোধ জানিয়েছি। বিশ্বব্যাংক এখন নিজেই বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে এবং এবছর রেমিট্যান্স প্রবাহে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে থাকবে। সংস্থাটি আরো বলেছে, চলতি বছর বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও ৮ শতাংশ বাড়বে।
বর্তমানে বিভিন্ন দেশে রয়েছেন প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তাদের পাঠানো এই রেমিট্যান্স। দেশের জিডিপিতে এই রেমিট্যান্সের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ।
বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। সে অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত করে কোনও কোনও ব্যাংক আরও ১ শতাংশ বেশি প্রণোদনা দিচ্ছে।