ব্যাংকিং খাতে আগ্রাসী ঋণে লাগাম টানতে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে অনুমোদিত ঋণ বিতরণ সীমা বা ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) দেড় শতাংশ আর ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য এক শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী জুনের মধ্যেই এই আইন কার্যকর হবে।
তবে ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে আমানতের সুদ হার অনেক বেড়ে যাবে। আমানত সংগ্রহে ব্যাংকগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।
এডিআর’র হার কমিয়ে মঙ্গলবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে তা দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে রক্ষিতব্য সিআরআর এবং দৈনিক ভিত্তিতে রক্ষিতব্য এসএলআর বাদে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল দাঁড়ায় ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক এবং প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য ৮৮ শতাংশ। তবে, মূলধন ভিত্তি, তারল্য পরিস্থিতি, আন্তঃব্যাংক নির্ভরশীলতা এবং সর্বোপরি এলসিআর ও এনএসএফআর সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ উল্লিখিত হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ (ইসলামী ব্যাংকের জন্য দুই শতাংশ) যোগ করে এডিআর (আইডিআর) এর সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারণ করতে পারে।
অর্থাৎ আগে প্রচলিত ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে ৮৫ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারতো। এখন থেকে এটি কমিয়ে প্রচলিত ব্যাংকের জন্য সর্বোচ্চ ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য সর্বোচ্চ ৮৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। যেসব ব্যাংকের এই সীমা বেশি মাত্রায় রয়েছে তা আগামী জুন মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে নামিয়ে আনতে হবে। এজন্য ফেব্রুয়ারি মাসে একটি পরিকল্পনা জমা দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এডিআরের হার কমানো হয়েছে। এতে আপত্তি নেই। তবে এর ফলে ঋণ বিতরণের সক্ষমতা কমে যাবে। আমানত না বাড়ালে অনেক ঋণ বিতরণ করতে পারবে না।
‘নির্বাচনী বছরে অনেকে অর্থ তুলে নিবেন। সেক্ষেত্রে আমানত সংগ্রহে ব্যাংকগুলো অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামবে। এতে আমানতের সুদ হার বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে প্রায় সব ব্যাংক সুদ হার বাড়িয়েছে। এক থেকে দেড় শতাংশ বেড়ে এ হার এখন ৮ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশে এসে ঠেকছে।’
তিনি বলেন, সময় ছয় মাস দেয়া হয়েছে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে যেহেতু নির্বাচনের বছর, তাই সময় আরো বাড়িয়ে দিলে ভালো হতো।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোর বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ প্রবৃদ্ধির হার ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত সোমবার চলতি বছরের প্রথমার্ধের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ নির্ধারন করা হয়েছে।
অবশ্য, মুদ্রানীতি ঘোষণার আগের দিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রূপালী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়ীক সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘এটা নির্বাচনের বছর, বাজারে টাকা-পয়সার ছড়াছড়ি হবে, কালো টাকাও আসবে। এজন্য ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাবধানতা থাকতে হবে।’