চীনের একজন নারী উচ্চতায় খাটো বলে শিক্ষক হিসেবে অযোগ্য বিবেচিত হয়েছেন। তার উচ্চতা ১৫০ সেন্টিমিটারের (৪ ফুট ৯ ইঞ্চি) কম বলে তিনি এই পেশায় যোগ দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি বলে জানিয়েছে শানজি নিউজ অনলাইন। এই নারীর নাম লি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
চীনের বেশ কয়েকটি প্রদেশে শিক্ষকতা পেশার যোগ্যতা অর্জনের জন্য উচ্চতাকে বিবেচনা করা হয়।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যবহারকারীরা। তারা জানিয়েছেন এই নীতি বৈষম্যমূলক।
অনেকেই বলেছেন, এই ঘটনাতেই প্রমাণিত হয় চীনের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। যেখানে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চেয়ে উচ্চতার মতো নগণ্য বিষয়ে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে।
‘আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে’
শানজি নরমাল ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি ভাষায় মেজর নিয়ে শেষ বর্ষ সম্পন্ন করছিলেন লি। ২০১৪ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
চলতি বছরের মে মাসেই, গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার মাত্র কয়েকদিন আগে, জানতে পারেন তিনি শিক্ষক হিসেবে কোয়ালিফাই করতে পারবেন না।
চীনের উত্তরের শানজি প্রদেশে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করতে একজন পুরুষকে অবশ্যই ১৫৫ সেন্টিমিটার এবং একজন নারীকে ১৫০ সেন্টিমিটারের উপর উচ্চতা হতে হবে। নার্সারিতে শিক্ষকতা করতে চাইলে ৫ সেন্টিমিটার কম উচ্চতা হলেও তারা বিশেষ অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে পারবে।
১৪০ সেন্টিমিটার বা ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার লি এই নীতি অনুযায়ী আবেদন করারই যোগ্যতা রাখেন না।
শানজি নিউজকে লি জানান, টিচার কোয়ালিফিকেশন সার্টিফিকেটের জন্য যে উচ্চতার সীমা রয়েছে, তা চার বছরেও কেউ লক্ষ্য করেনি। আমার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে।
তবে, এই সামলোচনার বিষয়ে এখনও কোন বক্তব্য দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এমন বিধিনিষেধ শুধু শানজিতেই প্রচলিত নয়। দেশটির অনেক অঞ্চলেই এমন নিয়ম রয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই এমন নিয়ম, কারণ ব্ল্যাকবোর্ডে লেখার জন্যতো শিক্ষকদের যথেষ্ট উচ্চতা থাকতে হবে।
কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই বিধিনিষেধ নিয়ে তীব্র সামলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সিচুয়ান, জিয়াংজি ও গুয়াংজি অঞ্চলে এই বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে।
‘সুন্দরী প্রতিযোগিতা নয়’
জনপ্রিয় সিনা উয়েইবো মাইক্রোব্লগে হাজারো ব্যবহারকারী লির প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে এবং শিক্ষকদের উচ্চতার নীতির জন্য সমালোচনা করেছেন। অনেকেই বলেছেন নৈতিকতা ও মেধাই এক্ষেত্রে বিবেচ্য হওয়া উচিত।
একজন লিখেছেন, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতেই শিক্ষকদের বাছাই করা উচিত, এটাতো কোন সুন্দরী প্রতিযোগিতা নয়।
উচ্চতা নয়, অন্যান্য গুরুত্বপূণ বিষয়ের দিকে মনোযোগী হতে বলেছেন অনেকে। গত ছয় মাসে বেশ কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে এই সংক্রান্ত উদ্বেগ আরো বেড়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে সাংঘাই ডে-কেয়ার সেন্টারের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় শিশুদের প্রতি অসদাচরণ করা হচ্ছে, যা দেশজুড়েই তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিলো।
একই মাসে রাজধানী বেইজিংয়ের একটি নার্সারির বিরুদ্ধে শিশুদের ইঞ্জেকশন দেয়া এবং ড্রাগ খাওয়ানোর অভিযোগ উঠে।
মে মাসেও একটি ফুটেজে দেখা যায় নার্সারির একজন শিক্ষক খারাপ আচরণের শাস্তি হিসেবে এক শিশুকে গরম পানি পান করতে জোড় করছেন।