মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য সমাপ্ত ইউনির্ভাসিটি রোভার চ্যালেঞ্জ আর্ন্তজাতিক রোবটিক প্রতিযোগিতায় বিশ্বের সেরা দশে স্থান করে দেশে ফিরেছেন ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনির্ভাসিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) এর ১১ তরুণ। সঙ্গে ফিরেছে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের তাক লাগিয়ে দেয়া ‘টিম এ্যাটেন্ডেন্ট’এর চার চাকা এবং একটি যান্ত্রিক হাতের সংযোজনে তৈরি গ্রহচারীযান। মহাকাশপ্রযুক্তির জগতে এই যানের নাম রোভার। এই রোভারটিই আজ বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের হাতে তুলে দেয় একগুচ্ছ ফুল, করতালিতে ফেটে পড়ে মিলনায়তনে উপস্থিত উৎফুল্ল দর্শকরা।
লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে লালগ্রহের মতো পাথুরে-উঁচুনিচু প্রান্তর জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে রোভারটি, সংগ্রহ করছে মাটি-পাথর। ১১ জোড়া কৌতুহলী চোখ সার্বক্ষণিক নজর রাখছে গ্রহচারী এই রোবটযান বা রোভারটির ওপর। এমনকি বিপদে পড়া নভোচারীর জন্য ওষুধ-পানি এগিয়ে দিচ্ছে রোভারটি, বিকল হওয়া মহাকাশ গবেষণাযন্ত্রে সরবরাহ করছে জ্বালানী।
প্রথমবারের মতো নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলগ্রহের মাটিতে নিজেদের রোভার পাঠানো এখনো কল্পবিজ্ঞানই বটে। তবে কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার আগ্রহ এদেশের তরুণদের আছে তা এখন বিশ্ববাসী জানে। সোমবার আইইউবি’র মিলনায়তনে১১ তরুণের এই বৈশ্বিক অর্জনকেই উদযাপন করা হয় ।

গেলাম, দেখালাম, জয় করলাম
প্রথমবারের মতো রোভার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে উন্নত দেশগুলোর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদামী রোভারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই অর্জনকে শুরুতেই সাফল্য হিসেবে দেখছে আইইউবি। ১১ জনের দলটির সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড. আশরাফুল আমিন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন,‘সবেমাত্র আমাদের রোবটিক্স কোর্স শুরু হয়েছে। এমন অর্জন শিক্ষার্থীদেও নতুন নতুন প্রযুক্তি চ্যালেঞ্জ নিতে উৎসাহিত করবে। প্রযুক্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষায় এমন অর্জন টিমের সবাইকে সাহস যোগাবে।’
১১ জনের এই প্রতিযোগী দলে টিম প্রধান ছিলেন বুয়েট থেকে সদস্য পাশ করে আইইউবিতে প্রযুক্তি পড়াতে আসা আবুল আল আরাবী। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন,‘উন্নত দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণকারী রোভারগুলো বানাতে যেখানে খরচ হয়েছে গড়ে ১০ হাজার ডলার তখন দেশের এই রোভারটি তৈরিতে বাজেট ছিলো মাত্র ২ হাজার ডলার। তাও দেশের বাইরে থেকে রোভার যন্ত্রাংশ আনার ঝামেলায় আমাদেরকে পার্টস-বডির জন্য ধোলাইখাল এবং পাটুয়াটুলির ওপরই ভরসা করতে হয়েছে। অন্যান্য রোভারের পেছনে নামীদামী প্রযুক্তি কোম্পানি স্পন্সর হিসেবে বিনিয়োগ করেছে। অথচ আমরা কাজ করেছি নিজেদের সীমিত সক্ষমতার মধ্যে কোনো স্পন্সর ছাড়াই।’

প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বিশ্বজয় করে আসা তরুণ দলের দলনেতা তবুও চান দেশের এই উদ্ভাবনী সম্ভাবনা নিয়ে আশার আলো দেখেন। তিনি বলেন,‘রোভার দিয়ে শুধু দুর্গম গ্রহে নয় বরং দেশের জরুরি প্রয়োজনেও কাজ করা সম্ভব। ধসে পড়া ভবনে, দুর্যোগে, বোমা নিষ্ক্রিয়করণের মতো বহু কাজে রোভারের মতো রোবটযান ব্যবহার করা এদেশেও দ্রুতই বাস্তব হবে।’
যথাযথ অর্থায়নের অভাবকে পাশ কাটিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনা তরুণদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রকল্পে সরাসরি আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন,‘এখন থেকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা রোবটিক্স প্রকল্প কিংবা রোভার চ্যালেঞ্জে পাশে থাকবে আইসিটি বিভাগ। ’
আইইউবি মিলনায়তনে দেয়া বক্তব্যে প্রযুক্তিখাতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা এবং লক্ষ্যমাত্রাপূরণে নেয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন তিনি।
উল্লেখ্য, ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতাটি প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণ মরুভুমি অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোকে পরবর্তী প্রজন্মের মঙ্গলযান তৈরীর চ্যালেঞ্জ জানানো হয়, যেসব যান ভবিষ্যতে নভোচারীদের সাথে সেই লালগ্রহের অভিযান চালাবে।
ইউনির্ভাসিটি রোভার চ্যালেঞ্জ ২০১৭ -তে রেকর্ড সংখ্যক ১৬ টি দেশের ৮২ দল অংশগ্রহণ করে। দুটি পর্যায়ে বাছাই করে ৩৬ টি দলকে মাঠপর্যায়ের প্রতিযেগিতার জন্য নির্বাচন করা হয়। ৭টি দেশের ৩৫ টি দল তাদের রোভারগুলো নিয়ে উটাহর মরুভূমিতে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
শেষ পর্যন্ত আইইউবি ‘টিম এ্যাটেন্ডেন্ট’ দল অংশগ্রহনকারী বাংলাদেশি দলগুলোর মধ্যে প্রথম, এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় এবং বিশ্বে দশম স্থান অধিকার করে।
ছবি: জাকির সবুজ