চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

আমলা নির্ভরতার বদলে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ান

বরিশালে রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে আমলাদের দ্বন্দ্ব দেশজুড়ে আলোচিত হচ্ছে। তবে এখানে আশ্চর্যের বিষয় হলো: পুলিশের বাদী হওয়া মামলায় আসামী হচ্ছে মৃত ছাত্রলীগ নেতা। এছাড়াও আসামী হয়েছে এমন এক ছাত্রলীগ নেতা, যে ঘটনার দিন এলাকাতেই ছিল না। এমনই গুরুতর অভিযোগ করেছেন সেই ছাত্রলীগ নেতা। এখন প্রশ্ন হলো: যে মামলার বাদী পুলিশ সেই মামলাই যদি মিথ্যে হয়, তাহলে আর মানুষ নির্ভর করবে কোথায়?

একটি ব্যানার অপসারণকে ঘিরে তুলকালাম কাণ্ডের শুরু। এর জেরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মামলার আসামী হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ও গ্রেফতার আতঙ্কে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য অপসারণ বন্ধ করে দিয়েছে তারা। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অনুরোধে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজে যোগ দিয়েছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে রোববার রাতে মেয়র ও প্রশাসনের মধ্যে সমঝোতা বৈঠকও হয়েছে।

Bkash July

এরপরও প্রশ্ন থেকে যায়। এখানে মেয়রের একটি কথা উল্লেখযোগ্য। ব্যানার অপসারণের প্রশ্নে মেয়র বলেছিলেন, ব্যানার লাগানো দলের সিদ্ধান্ত। অপসারণও দলের সিদ্ধান্ত। এটা দলের ব্যানার, ইউএনও সরকারি চাকরি করেন, বাধা দেওয়ার কেউ না। মেয়রের এই কথাটি কি উড়িয়ে দেওয়ার মতো? ইউএনও কেন দলীয় ব্যানার ইস্যুতে জড়ালেন?

১৫ আগস্ট নিঃসন্দেহে জাতীয় শোক দিবস। আওয়ামী লীগের দলীয় শোক এক্ষেত্রে একটু বেশিই হবে।আর ইউএনও দলের কেউ নন। তিনি এই শোকের দিনে পারিবারিক কাউকে হারাননি। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ হারিয়েছেন। অবশ্যই এই শোক দিবসের ব্যানার টানানোতে তার সাথে সমন্বয় করা উচিত ছিল।তিনি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মেয়র ও আওয়ামী লীগেরও নেতা। ইউএনও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী মাত্র। আর সাদিক আব্দুল্লাহর বাবা-মা তথা গোটা পরিবার এই হত্যাকাণ্ডের পারিবারিক ভুক্তভোগী। এই পরিবারটিকে দোষী-নির্দোষ প্রমাণের আগেই একজন ইউএনও’র কারণে কেউ দুর্বৃত্ত বলতে পারেন না।একটি রাজনৈতিক সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়ে আমলারা কোনভাবেই রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বলতে পারেন না ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’।

Reneta June

রাজনৈতিক দলের নেতা দোষ করলে পার পায় না। পার না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে আমলাদের বেলায় অন্যরীতি। বরিশাল ইস্যুতে আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতা আটক হয়ে গেল। অথচ গুলিবর্ষণের পরও কেউ আটক হয়নি। রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সহজেই মামলা করে দেয়া যায় আর আমলার বেলায় করতে হয় মামলার আবেদন। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন জাগে দেশটা কি আমলাতান্ত্রিক সরকারের অধীনে নাকি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে? দেশ রাজনৈতিক সরকারের অধীনে আছে বলেই বিশ্বাস করি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন যুব লীগের পদ হারালেন। তিনি বলেছিলেন: ‘ওসি কেন রাজনৈতিক শ্লোগান দিলো? দেশে কি শ্লোগান দেয়ার মতো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর এতই অভাব?’ এই প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। আর এই প্রশ্নের উত্তর কী হলো? ব্যারিস্টার সুমনকে আত্মপক্ষ সমর্থনেরও কোন সুযোগ দেয়া হলো না। তাকে যুবলীগ হতে বহিষ্কার করা হলো। এককথায় আমলা বা অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপারে কোন প্রশ্নও তোলা যাবে না। এমনই অপ্রতিরোধ্য বানানো হচ্ছে তাদের।

কিছুদিন আগে এমপি নিক্সন চৌধুরীর সাথেও আমলাদের দ্বন্দ্ব হয়েছে। সবক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে আমলারা যেন জবাবদিহিতার উর্ধ্বে। সর্বশেষ বরিশালে মেয়র ইউএনও দ্বন্দ্বে তোলপাড় চলল দেশে। সোশ্যাল মিডিয়ায় চললো তুমুল লেখালেখি। গ্রেফতার হলো সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আমলাদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। পালিয়ে থাকতে হয়েছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের। আমলাদের কাউকে পালিয়ে থাকতে হয়নি। বরিশালের মেয়র বনাম ইউএনও দ্বন্দ্ব সমঝোতা হয়ে গেল। এখন প্রশ্ন, যেসব মামলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হলো সেগুলো কি মিথ্যে ছিল? আর একজন ইউএনও এবং ওসি কি কোন মিথ্যা মামলা করতে পারে?আইনের রক্ষক হয়ে তারা কি পারে কোন মৃত ব্যক্তির নামে মিথ্যা মামলা দিতে? এ প্রশ্নের জবাব দেবে কে?

এদেশে যেন সব সুযোগ আমলাদেরই। যে দলই ক্ষমতায় যায় সে দলেরই স্তুতি করে সুবিধা নেয় তারা। যে ওসি আওয়ামী লীগের দলীয় শ্লোগান দিলো ক্ষমতাসীন দল বদল হলে কি তাদের দলীয় শ্লোগানও বদল হবে না? দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে ইউএনও ও ডিসিদের রাজনৈতিক নেতারা স্তুতি করে মনে হয় যেন দেশে কোন রাজনৈতিক সরকার নেই। আমলাতান্ত্রিক সরকারই রয়েছে। তাদের বদলিতে ও পদায়নে বিদায় সংবর্ধনা ও অভিনন্দনের স্তুতিতে ভাসায় রাজনৈতিক নেতারাই। আমলাদের আগে পরে ও মরণোত্তর সর্বত্রই সুযোগ। চাকরি শেষে হয়ে যায় এমপি, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা হতে পারে না আমলা। প্রখ্যাত কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্দুল গাফফার চৌধুরী একটি নিবন্ধে লিখেছেন, পাকিস্তানে মুসলিম লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ধীরে ধীরে আমলা নির্ভর হয়ে পড়েছিল।সেই বিপজ্জনক প্রবণতা স্বাধীন বাংলাদেশে বর্তমান আওয়ামী লীগের মধ্যে দেখা দিয়েছে। দলের সাংগঠনিক শক্তি নেই। মন্ত্রীদের চাইতে তাদের ক্ষমতা বেশি।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View