প্রায় ৩ বছর পর আবার বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক বা কর্মী নিতে দুই দেশের সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। রোববার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে স্বাক্ষরিত ওই সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশ থেকে সেদেশে কর্মী পাঠানো শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
আমরা জানি, নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে মালয়েশিয়া সরকার ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দেয়। তারপর নতুন করে সেখানে শ্রমিক পাঠাতে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলেছে দফায় দফায়। একটু দেরিতে হলেও সেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সাফল্যে এসেছে। আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানো শুরু করতে পারবে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, দুই দেশের মধ্যে এই সমঝোতার ফলে শ্রমিকের নিয়োগ থেকে কর্মসংস্থান, তাদের থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার নিশ্চয়তাসহ নানা রকম সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়া যাওয়ার পর সেখানকার সব খরচ একজন শ্রমিকের নিয়োগকর্তাই বহন করবে। এর বাইরে ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইনস্যুরেন্স ইত্যাদি খরচ; এমনকি কোনো শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠাতে চাইলে, সেই খরচও দেবে তারাই। মোটা দাগে বলতে গেলে- বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়া একজন শ্রমিক সব ধরনের সুবিধাই পাবেন।
অনেক বছর ধরেই মালয়েশিয়ার সার্বিক উন্নয়নে নানাভাবে অবদান রাখছে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অসংখ্য শ্রমিক। তারা যে শুধু সেদেশের উন্নয়নেই ভূমিকা রেখেছে, তা কিন্তু নয়। তাদের অবদান আছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রেও। তবে সেই অসংখ্য শ্রমিকদের মধ্যে সামান্য একটা অংশ নানা ধরনের অনিয়মে জড়িয়ে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে সেদেশের মেয়েদের বিয়ে করে সন্তানসহ ফেলে আসা, বারবার মালয়েশিয়ার আইন ভাঙা, এমনকি হত্যা-অপহরণের মত বড় রকমের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বহু ঘটনার কথাও আমরা জানি। যার ফলশ্রুতিতে এক পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি।

আশার কথা, আজকে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতায় সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলেছে। এই সুযোগকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে অতীতের যেসব ভুলের কারণে দীর্ঘদিন নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয়েছিল, তা থেকে অবশ্যই শিক্ষা নিতে হবে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই এইসব শ্রমিকরাই মূলত প্রবাসে বাংলাদেশের একেক জন প্রতিনিধি। এই সত্যিকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। দেশের সম্মানকে রক্ষার পাশাপাশি ইতিবাচক ইমেজ তৈরিতেও ভূমিকা রাখতে হবে তাদেরকে।
আমরা মনে করি, মালয়েশিয়ায় নতুন যাত্রায় আগের ভুল কোনোভাবেই করা যাবে না- এ বিষয়ে সচেতন করতে আলাদা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদেরকে উজ্জীবিতও করতে হবে।