চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অপারেশন টোয়াইলাইট: প্যারা-কমান্ডোদের জঙ্গিবিরোধী দ্বিতীয় অভিযান

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির আতিয়া মহলে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক জঙ্গিদের ঘিরে রাখার কারণে ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ওই বাড়ির অসংখ্য মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্য, র‌্যাব এবং সোয়াট বাহিনীর সদস্যরা বারবার চেষ্টা করলেও জঙ্গিরা আত্মসমর্পন করেনি। বেসামরিক লোকজনের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, এ বিষয়টি মাথায় রেখে তাই শনিবার সকাল ৯ টার পর ‘অপারেশন ‘টোয়াইলাইট’ সাংকেতিক নাম দিয়ে সেখানে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের প্যারা-কমান্ডো ফোর্স।  এটি দেশের ইতিহাসে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে প্যারা-কমান্ডোদের দ্বিতীয় অভিযান।

এর আগে ২০১৬ সালের গুলশান হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গিদের হাত থেকে দেশি-বিদেশি জিম্মিদের উদ্ধার করতে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে দেশের ইতিহাসে প্রথম প্যারা-কমান্ডোদের ব্যবহার হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত সোয়া নয়টার দিকে পাঁচ জঙ্গি রাজধানী গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় ঢুকে ভিতরের দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে। জিম্মি অবস্থার অবসান করতে ঘটনার ১০ ঘন্টা পর সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে সরকার প্রধানের নির্দেশে সেনাবাহিনীর ফার্স্ট প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করেন।

ইংল্যান্ড দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহড়া করে প্যারা-কমান্ডো দল

শনিবার সকাল ৮টা থেকে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেনের নেতৃত্বে অভিযান শুরু করে প্যারা-কমান্ডো দল । এখনও সেই অভিযান চলছে। সকাল ১০টার দিকে ওই বাড়িতে একদিন অবরুদ্ধ থাকা মানুষগুলোকে বের করে আনা শুরু হয়। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের আগে বের করা হয়। তাদের মেইন রোডে নিয়ে গাড়িতে করে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে মোট ৫৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

আইএসপিআর এর পরিচালক লে. কর্নেল রাশিদুল হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সিলেটের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নারী ও শিশুসহ বেসামরিক লোককে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা। অভিযান খুবই সতর্কতার সঙ্গে ধীরগতিতে চালানো হচ্ছে। যাতে বেসামরিক লোকজনের কোনও সমস্যা না হয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ব্রিগেড
যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিল, যুক্তরাজ্যের স্পেশাল এয়ার সার্ভিসের (এসএএস) মতো বাংলাদেশের রয়েছে প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়ন। যারা চিতা নামেও পরিচিত। দেশের অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীদের কর্মক্ষমতা যেখানে শেষ, ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয় প্যারা-কমান্ডোদের কাজ। বন্দি ও জিম্মি উদ্ধার, কাউন্টার টেরোরিজম, মানব পাচার ও মাদক চোরাচালান রোধ, বিশেষ উদ্ধার অভিযানসহ জল, স্থল এবং আকাশে যেকোনো বিশেষ অভিযানে দায়িত্ব দেয়া হয় সেনাবাহিনীর এই প্যারা-কমান্ডোদের। তাদের মূলমন্ত্র ‘ডু অর ডাই’ বা ‘বাঁচো অথবা মরো’। এই এলিট বাহিনীর সদর দপ্তর সিলেট ক্যান্টমেন্ট।

প্যারা-কমান্ডো বাহিনী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি স্বাধীন ও বিশেষ অপারেশন বাহিনী। সেনাবাহিনীকে আরও বেশি শক্তিশালী ও কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর দীর্ঘমেয়াদী আধুনিকায়ন কর্মসূচি ফোর্সেস গোল-২০৩০ শুরু হয়। যার মূল লক্ষ্য ছিলো বাহিনীর সদস্যদের আকার বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদেরকে উচ্চ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্রে সজ্জিত করা। সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেশীয় এলিট বাহিনীতে উন্নয়নের বিষয়টিও এই কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো। এই বাহিনীর মূল কাজ হচ্ছে যে কোনো সময়ে, যে কোনো স্থানে এবং যে কোনো অবস্থায় বিশেষ অপারেশন পরিচালনা করা।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন রেজিমেন্টের সব থেকে চৌকষ ও যোগ্য আগ্রহী ব্যক্তিদের রেকর্ড যাচাই-বাছাই করে প্যারা-কমান্ডো বাহিনীর জন্য নির্বাচন করা হয়। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে এদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরপর থেকে এদের ঠিকানা হয় সিলেট ক্যান্টনমেন্টের প্যারা-কমান্ডোদের দলে।

সফলভাবে অপারেশন থান্ডার বোল্ট সম্পন্ন করে প্যারা-কমান্ডোরা

কোল্ট এমফোরএওয়ান স্নাইপার রাইফেল, এসভিডি স্নাইপার রাইফেল, ড্রাগোনোভ স্নাইপার রাইফেল, টাইপফিফটিসিক্স অ্যাসল্ট রাইফেল, টাইপ এইট্টিওয়ান অ্যাসল্ট রাইফেল, ব্যারেট নাইনএমএম পিস্তল ইত্যাদির মতো আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করেন প্যারা-কমান্ডো সদস্যরা। এছাড়া বিশেষ ছুড়ি, হাতবোমা, সানগ্লাস, ঘড়িসহ এই ধরনের নানা রকম এলিট জিনিসপত্র ব্যবহার করেন তারা।

প্যারা-কমান্ডোদের ব্যবহৃত কোল্ট এমফোরএওয়ান স্নাইপার রাইফেল। ছবি- ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।

প্যারা-কমান্ডো বাহিনী গঠনের আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অনেক কমান্ডো ছিলেন। বাংলাদেশের নাগরিক যারা পাকিস্তান আর্মির সদস্য ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই পাকিস্তান আর্মি স্পেশাল ফোর্সেস (এসএসজি) থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত হন। তারা মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বসূচক অবদান রাখেন। কর্ণেল তাহের কমান্ডো ট্রেনিংয়ে প্রথম স্থান অধিকার করার কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।