চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের মহিষের দুধের কাঁচা দধি সন্দ্বীপ ব্রেড নামে প্রায় ৪০০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী ওই দধি অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান উপাদান। অনেকেই দূর-দূরান্তের পছন্দের মানুষ ও আত্মীয়দের জন্য দধি কিনে নিয়ে যান। এছাড়া দেশের বাইরেও প্রিয়জনদের কাছে দধি পাঠান অনেকে।
এ টক দধি গুড়, মিষ্টি অথবা চিনি দিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া মুড়ি, চিরা ও খৈ দিয়েও খাওয়া যায়। দধি সকল সামাজিক, পারিবারিক ও ঘরোয়া ভোজে থাকতেই হবে। খাবার তালিকায় জনপ্রিয় এই খাদ্যটি না থাকলে সামাজিকতা পরিপূর্ণ হয়ে উঠে না। এছাড়া খাবার হজমে কাঁচা দুধের দধি বাড়তি সহায়তা করায় এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
স্থানীয় মহিষ খামারি মোহাম্মদ টিপু বলেন, প্রায় তিন হাজার বছর আগে সন্দ্বীপ উৎপত্তি হলে এখানে ক্রমশই জনবসতি গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হলে তারা মহিষ, গরু, ছাগল পালন শুরু করে। এখানকার ছোট বড় অসংখ্য চরে মহিষ পালনে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। বিশেষ করে অবস্থা সম্পন্ন গৃহস্থ পরিবারগুলোর শত শত মহিষ প্রতিপালন করে। কালের বিবর্তনে যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
উড়িরচরের আরেকজন মহিষ খামারি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে প্রায় চারশ’ বছর আগে স্থানীয়রা মহিষের দুধ থেকে কাঁচা দধি উৎপাদন শুরু করে। যা ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হয়ে বর্তমান সময়েও সমান জনপ্রিয়। এখানে এমন কোন বিয়ের অনুষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে দধি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়নি। এতেই বোঝা যায় এখানে এটা কত জনপ্রিয়।
দ্বীপের প্রায় শতাধিক বিচ্ছিন্ন চর রয়েছে। নদীর মাঝখানে এসব চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এলাকা জুড়ে সবুজ ঘাসের সমারহ। আর এসব চরে লালন করা হয় হাজার হাজার মহিষ। সবুজ ঘাস খেয়ে প্রতিপালিত হয় এসব মহিষ। যুগ যুগ ধরে বংশপরাক্রমায় বহু পরিবার এখানে মহিষ ও দধি বিক্রির পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। অনেকে আবার নিজস্ব মহিষের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন করে দধি তৈরি করেন। দধির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন চরে গড়ে উঠেছে শত শত মাহিষ নিয়ে বাথান। সূর্য ওঠার সাথে সাথে এসব বাথান থেকে দুধ আসতে শুরু করে দ্বীপের বাজারগুলোতে। আর এ দুধ দিয়েই বানানো হয় মজাদার দধি।
এই উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে দধির দোকানে সারাবছর দধি বিক্রি হয়। আর হাটের দিনে দধির টালির পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা।
দ্বীপের আকবর হাট এলাকার দধি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, সারা দেশের মধ্যে শুধু এ অঞ্চলেই এক সময় মহিষের দুধের দধির কদর ছিল। অন্যান্য এলাকার মানুষ প্রথম প্রথম এর স্বাদ বোঝে না। বার বার যারা এটা খেয়েছে তারাই বোঝে এ দধি কতটা মজাদার। সেই প্রাচীন আমল থেকেই দধির প্রচলন এই সন্দ্বীপে। সময়ের সাথে সাথে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে আরো।
মহিষের দুধের দধি তৈরিতে তেমন কোন বাড়তি ঝামেলা নেই। দুধ জ্বাল বা শোধন করতে হয়না। শুধু কাঁচা দুধটা ছেঁকে মাটির পাত্রটি (টালি) পরিষ্কার করে তাতে দুধ ঢেলে বসিয়ে দিলেই দধি হয়ে যায়। পরে সম্পূর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে তা বেঁধে দেওয়া হয়। যাতে সহজেই পরিবহন করা যায় দূর-দূরান্তে। এখনকার দধি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের কাছে পাঠানো হয় প্রতিদিনই।