গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও হাওড়ের অন্যান্য অঞ্চলে আগাম প্লাবনে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান। আরো বেশ কিছু ফসল রক্ষা বাঁধ রয়েছে হুমকির মুখে। অন্যদিকে হাওর ও নদীর পানি দূষিত হওয়া এবং পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন জেলার হাওরের বেশির ভাগ মাছ মরে পচে যাচ্ছে। একদিকে ধান তলিয়ে সর্বস্বান্ত কৃষক, অন্যদিকে ঝড়ের পর এভাবে মাছ মরে যাওয়ায় হতাশ মৎস্যজীবীরা। কিন্তু শুরু থেকে দূর্গত এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেয়া হলেও আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অনাস্থার খবর বেরিয়েছে। হাওরবাসীরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোন সাহায্য-সহযোগিতা আসে তাহলে তা যেন চেয়ারম্যান, মেম্বারদের মধ্যে বিতরণ না করে সেনাবাহিনী বা বিজিবির মাধ্যমে বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। এতেই দুর্গত মানুষদের ত্রাণ নিয়ে যে কী পরিমান দুর্নীতি হচ্ছে তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। বারবার সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতের বাস্তবতা ও আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার বাস্তবতাতেই সাধারন জনগনের মধ্যে এই আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এছাড়া প্রতিবছর বিভিন্ন হাওর রক্ষা বাঁধের জন্য বরাদ্দ টাকা আত্মসাতের অভিযোগও নতুন নয়। প্রতিবছরই বাঁধগুলোর নামে বরাদ্দ আসে আর বরাদ্দ যায় রাঘব বোয়ালদের পেটে। অবশ্য সুনামগঞ্জে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদল বিভাগীয় কমিশনার নাজমান আরা খানমের সঙ্গে বৈঠক করে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার পর সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীসহ আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেখানে হাওর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন প্রকল্পের নথি সংগ্রহ করে তারা। দুদকের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। অন্যদিকে হাওরবাসীর এই দুর্দিনে হাওরের একজন অধিবাসী ও একজন কৃষকের সন্তান হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাদেরকে দেখতে গিয়ে বলেছেন, বিরাজমান এই পরিস্থিতিতে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন এবং আমাদের এই অবস্থার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। আমরাও তার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ এবং হাওরবাসীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বলতে চাই, সঠিকভাবে দূর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি প্রতিবছরের এমন নিত্য সমস্যার সমাধানের দিকে নজর দেয়া জরুরি। পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক প্লাবন থেকে হাওরকে রক্ষার জন্য যথাযথ নাব্যতা সৃষ্টি করতে নদীগুলোর ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং টেকসই ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। এ ব্যাপারে শিগগিরই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে উদাত্ত আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে মাছ মরে যাবার কারণ হিসেবে ইউরেনিয়াম মিশে যাবার যে কথা বলা হচ্ছে তা যদি ঠিক হয় তাহলে সেটা খুবই উদ্বেগের। অবিলম্বে এ বিষয়েও সরকারকে দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।