মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিশুরা বাংলাদেশকে তাদের আশ্রয়দাতা মনে করলেও বিশ্বজুড়ে নিজেদের অবহেলার শিকার হওয়ার বিষয়ও বুঝতে পারছে। ইউনিসেফ এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে তারা তাদের অবহেলিত হওয়ার কথা জানিয়েছে। মিয়ানমারের তৈরি করা এই সংকটে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ৬০ শতাংশই শিশু। যে বয়সে তাদের হাতে খেলনা এবং বই থাকার কথা, সেই বয়সে এমন বিভীষিকার শিকার হলেও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যেন একেবারেই চুপ! হাতেগোণা যে দু’চারটা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে কাজ করছে তারাও অর্থ সংকটে ভুগছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সহায়তা না পেলেও পরমাণু অস্ত্র এবং যুদ্ধের দামামায় ঠিকই বিশ্বের অনেক দেশের হাজার কোটি ডলার খরচ করার প্রতিযোগিতাও দেখা যায়। অথচ সবসময় মানবতার বুলি আওড়িয়ে বেড়ালেও এই বিষয়ে যেন তাদের কোন দায় নেই! অনেকে আবার এই রোহিঙ্গা শিশু এবং নারীদের চরম দুর্ভোগের সময় মিয়ানমারকে সহিংসতা বন্ধে চাপ না দিয়ে বর্মী জেনারেলদের সঙ্গে নিজেদের ব্যবসায়িক এবং আঞ্চলিক স্বার্থ নিয়ে দেনদরবারে ব্যস্ত আছেন। এমনকি এ কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। অল্প সংখ্যক দেশ রোহিঙ্গা সংকটে তাদের পক্ষে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করলেও এই সমস্যা সমাধান এবং সংকটকালীন সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা অপ্রতুল। এরকম অবস্থায় ২৩ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের সহায়তার বিষয়ে জেনেভায় বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশের সমন্বয়ে সম্মেলন হতে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, সম্মেলন থেকে এই মানবিক সংকট থেকে উত্তরণের দিকনির্দেশনা আসবে। বিশেষ করে শিশু এবং নারীসহ মানবিক সংকটে থাকা রোহিঙ্গাদের সহায়তা এবং এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমারকে বাধ্য করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রোহিঙ্গা শিশুদের কোমল হৃদয়ে এই ভরসা দিতে হবে যে, তোমাদের সংকটকালীন মুহূর্তে তোমরা একা নও; বিশ্ব তোমাদের পাশে আছে।