বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আশঙ্কায় রয়েছে বন্যা কবলিত মানুষ। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় ত্রাণ সহায়তা পেতেও ভোগান্তিতে ভুক্তভোগীরা।
সিলেট: সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পানিতে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পাড় উপচে প্রতিদিনই নতুন প্লাবিত হচ্ছে। জেলার ১৩ টি উপজেলার মধ্যে ৮ টি উপজেলার ৫৫ টি ইউনিয়নে প্রায় ৫০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবন যাপনের পাশাপাশি অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ।
মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দী। কুশিয়ারা নদী, হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইলহাওরে পানি বৃদ্ধির কারণে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারি তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ২ লাখ ৬৫ হাজার ৩০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫১৯টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া ২৭৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হওয়ায় শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ আছে। বন্যায় আউশ ও রোপা আমনের ৯৫৫ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ১ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন ও ৩০ লাখ টাকা, ৩০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে।
হাওরসমূহের পানি দ্রুত না কমার কারণে দুর্গত মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
কক্সবাজার: টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পানিতে কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, রামু ও সদরের শতাধিক গ্রামের ৩ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী। বীজতলা বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষক। তবে বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বান্দরবান: টানা দুইদিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের লামা- আলীকদম সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে বন্যার পানিতে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। পানির নিচে তলিয়ে গেছে কয়েকশ’ বাড়িঘর, দোকানপাট ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তর।
পাহাড় ধসের আশঙ্কায় সর্তকতা জারি করেছে প্রশাসন। পাহাড়ের নিচে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফোগ্যা মার্মা জানান, বন্যায় তার ইউনিয়নসহ উপজেলার মংচা পাড়া, রোয়াম্ভু, বশির কারবারী পাড়া, যোগেন্দ্র পাড়া, মোস্তাক পাড়া, রেপার পাড়া বাজার পাড়া, ছাবের মিয়া পাড়া, আমতলীর চরসহ বেশ কিছু এলাকার কয়েক’শ ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।