চৌধুরী সাহেব শুধু নামে চৌধুরী না। কাজেকর্মে, চলনে-বলনেও চৌধুরী সাহেব। বাজারের খাসি ইলিশটা সবসময় তার ব্যাগেই মুখ লুকায়।
সেই চৌধুরী সাহেবের মেয়েকে দেখতে এসেছে পাত্রপক্ষ। পাত্রপক্ষ ‘চৌধুরী’ বংশের না হলেও একেবারে ছোটখাটো কেউ না। ভালোই নামডাক আছে। ছেলে ‘হবু নেতা’। আয় রুজি ভালো। প্রভাবশালী। বছরে ছয় মাসের বেশি কখনোই জেলে থাকে না। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
চৌধুরী সাহেব পাত্র পক্ষের মন জয় করার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। চার তারকা হোটেলের বাবুর্চি এলো রান্না করতে। চাইনিজ, ইটালিয়ান, থাই- সব রকম খাবার আইটেম রাখলেন। ছেলে যেহেতু ‘হবু নেতা’, খাবার শেষে ‘গোপন পানাহারের’ ব্যবস্থাও রইল। এবার বিয়েটা হবেই হবে, চৌধুরী সাহেব আত্মবিশ্বাসী।
পাত্র পক্ষ এসে সোজা এন্ট্রি নিলো রান্না ঘরে। পাত্রের দুলাভাই বললেন, ‘যাদের সাথে শ্যালক বিয়ে দেব তাদের অবস্থান কেমন জানতে হবে না?’ চৌধুরী সাহেব এক নিঃশ্বাসে তার স্থাবর-অস্থাবরের হিসাব দেওয়া শুরু করলেন।
‘আশুলিয়ায় দুইটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, সিরাজগঞ্জে একটা খামার, নারায়ণগঞ্জে মাঝারী জাহাজ কারখানা (আগামীতেই সেটাকে ভারি করে তোলা হবে), উত্তরায় তিনটা বাড়ি… কি নেই আমাদের?’
‘থামেন,’ বলে চৌধুরী সাহেবকে থামিয়ে দিল পাত্রের দুলাভাই। ‘আগে দেখি বাসায় পেঁয়াজ আছে কয় কেজি।’
বলাই বাহুল্য, চৌধুরী সাহেবের সব আয়োজন ভেস্তে গেল। যেই বাড়িতে কেজি কেজি পেঁয়াজের মজুদ নেই, সেই বাড়িতে কিছুতেই ছেলে বিয়ে দেবে না পাত্রের বাবা।
আপাত দৃষ্টিতে গল্পটা পেঁয়াজখুরি মনে হলেও বাস্তবতা কিন্তু অনেকটাই এমন। বিশ্বাস না হলে পেঁয়াজ বাজার হতে একবার ঘুরে আসুন।
পেঁয়াজের কেজি এখন ১০০ টাকা। যা সপ্তাহের শুরুতে ছিল ৭০/৮০ টাকা। গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ টাকা। একই অবস্থা মরিচের বেলায়। দাম বাড়ার প্রতিযোগিতায় “কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান” অবস্থা।
এমতাবস্থায় এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘পেঁয়াজের দাম কমানো যায় কী করে? কী করে পেঁয়াজকে নাগালের ভেতরে আনা যায়?’ বন্ধু গলা কেশে চেহারায় দার্শনিক ভাব এনে বলল, ‘নাগাল’কে এত বড় করতে হবে যে, পেঁয়াজ যত দূরেই যাক নাগালের বাইরে যেন যেতে না পারে।’
নাগালকে বড় করার কোনো উপায় বন্ধু বাতলে দিতে পারেনি। আমিও আপনাদের জানাতে পারব না কিভাবে নাগাল বড় করা যায়। তবে লেখার শুরুর সেই পাত্রের আরেকটা পাত্রী দেখার গল্প বলতে পারব।
সেই হবু নেতা গেছেন পাত্রী দেখতে। পাত্রী দেখা শেষ। দুই পক্ষের পছন্দ হয়েছে। ফাইনাল কথা বলার আগে পাত্রীর বাবা পাত্রের দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করলেন,
-তা বাবা, পাত্রের সবই তো পছন্দ হলো। এবার একটু বলেন, পাত্রের কোনো খারাপ অভ্যাস নেই তো?
-আরে নাহ, পাত্রের কোনো খারাপ অভ্যাস নেই। শুধু মাঝে মাঝে পেঁয়াজ খায়।
-বলেন কি, পেঁয়াজ খায়?
-সবসময় খায় না তো, সিগারেটের গন্ধ ঢাকতে খায়।
-ছেলে সিগারেটও খায়?
-আরে সবসময় খায় না, গাঁজা ম্যানেজ করতে না পারলে খায়।
-ওরে খোদা, ছেলে গাঁজা খোর?
-আরে নাহ, সবসময় খায় না তো, হাতের কাছে ফেনসিডিল না পেলে খায়।
-এসব কী বলছো বাবা? ছেলে ফেনসিডিল খায়?
-এত ভয় পাচ্ছেন কেন? নিয়মিত ফেনসিডিল খায় না তো, ইয়াবা খেতে না পারলে সেদিন শুধু খায়।
-আমার মাথা ঘুরতেছে, কী ভয়ানক কথা। ছেলে ইয়াবা খায়?
-ভয় পাবেন না তালই সাহেব। ছেলে সর্বদা ইয়াবা খায় এমন ভ্রান্ত ধারণা করে বিয়েটা ভাঙ্গবেন না। শুধু জেলের বাইরে থাকলে ইয়াবা খায়। জেলে ইয়াবা সরবরাহ করা খুব কঠিন।
এই ঘটনা জানার পর আমার এক চাচা চাচিকে বলতেছিলেন, তোমার ছেলেকে পেঁয়াজ থেকে দূরে রাখবে। পেঁয়াজ খুবই খারাপ জিনিস।
পেঁয়াজের যে দাম, আমরা এখন বাধ্য হয়েই পেঁয়াজ থেকে দূরে থাকি।
পেঁয়াজের উচ্চমূল্যের সুযোগ নিয়ে এক বন্ধু ক্লাসের সবচে সুন্দরী বান্ধবীকে বিয়ে করে ফেলল। আমাদের সবার প্রস্তাব যে মেয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে সে মেয়ে এই বন্ধুকে কেন বিয়ে করল ভেবে পাচ্ছি না। কিভাবে পটালো? উৎসাহ দমিয়ে রাখতে না পেরে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে এই অসাধ্য সাধন করলি? বন্ধু বলল, তোমরা প্রস্তাব পাঠাইছো বান্ধবীর কাছে। আমি প্রস্তাব পাঠাইছি বান্ধবীর মায়ের কাছে। একটা চিঠি লিখেছিলাম ওর মাকে। চিঠির সাথে ‘অ্যাটাচড’ করে দিলাম কয়েকটা পেঁয়াজ।
চিঠিতে শুধু লিখেছিলাম,
“আপনার মেয়ে শাবনুর হলে আমি হবো রিয়াজ
রোজ সকালে হাজির হবো, হাতে নিয়ে পেঁয়াজ।”
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)
ছবি: রণ মাহমুদ