মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন জোর করে তৎকালীন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা বাংলার বদলে অন্য ভাষা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ বলে পাকিস্তানি শাসকরা যখন দম্ভ প্রকাশ করেছিল, বায়ান্নর এই দিনে তখনকার পূর্ব বাংলার ছাত্র-শিক্ষক-জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষ এর বিরুদ্ধে জেগে উঠে। পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরশাসকদের নির্দেশে মাতৃভাষার দাবিতে শান্তিপূর্ণ সেই মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। তারা ভেবেছিল বুলেট দিয়ে বাঙালির এ সংগ্রামকে দাবিয়ে রাখতে পারবে। কিন্তু তারা তা পারেনি। বরং এই বুলেট আর রক্তই কালের পরিক্রমায় পাকিস্তানের বুক চিড়ে জন্ম দিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র। বাঙালির সংগ্রামী মানসিকতা আর সাহসের কাছে হার মানতে হয়েছে তাদেরকে। ১৯৯৯ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সেই হিসেবে পাকিস্তানের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে তাদের আরও মর্যাদা দেয়ার কথা। কিন্তু তারা সেখানকার সব মাতৃভাষাকে যে পরিপূর্ণ মর্যাদা দিচ্ছে এমন কোন খবর আসছে না। কয়েকজন ভাষাবিদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ডন’ এর আজকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উর্দু ভাষাভাষী শাসকগোষ্ঠী প্রায় সাত দশক পরও পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষার প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে না! এখনও পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের শিশুরা নিজেদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিতে পারছে না। মন খুলে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশের কোনো স্বীকৃতি নেই। তারা বাধ্য হয়ে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ উর্দু কিংবা ইংরেজিতে শিক্ষা নিতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা ও বিভিন্ন মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিকে এখনও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে শাসকগোষ্ঠী। অতীত থেকে শিক্ষা না নেওয়ায় এই উপেক্ষার বিপরীতে সব প্রধান মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পাকিস্তানের প্রগতিশীল লেখক, বুদ্ধিজীবি ও সিভিল সোসাইটি কথা বলে আসছে। আমরা তাদের এই দাবিকে সমর্থন করি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের কাছে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চেয়ে বালুচ, পাখতুন, পাঞ্জাবসহ অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া উচিৎ। তাদের ওপর সেই বায়ান্নর মতো করে অনৈতিকভাবে উর্দু চাপিয়ে দেয়াকে আমরা সমর্থন করি না। একটি দেশে বিভিন্ন মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়াতে আমরা দোষের কিছু দেখি না। এতে বরং মানুষের সংস্কৃতিকে মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু এখনও অতীত থেকে বের না হয়ে সেই স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার লালনের কারণেই আজ পাকিস্তান সারা বিশ্বে একটি ব্যর্থ ও জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হয়েছে। মা, মাটি ও মানুষকে সম্মান না করলে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ব মানচিত্রে পাকিস্তান নামের কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্বই থাকবে না বলেই আমরা মনে করি। কিন্তু অতীত থেকে শিক্ষা নেয়ার মানসিকতা পাকিস্তনি স্বৈরশাসকদের আদৌ আছে কি?