শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর মুক্তিযোদ্ধা ন ম নাজমুল আহসান স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর স্বাধীনতা পদক-২০১৭তে ভূষিত হয়েছেন। কর্নেল তাহেরের ১১ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল আহসান। তার অধীনে ১২০-১৪০ জন যোদ্ধা ছিলেন। শেরপুরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার জন্য শেরপুরের কাটাখালী ব্রিজ ও তিনানীর ফেরি উড়িয়ে দেওয়ার সফল অপারেশনের পরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও আলবদরদের গুপ্ত হামলার মুখে পড়েন। দলের সবাইকে সরে যেতে নির্দেশ দিয়ে একাই শত্রুপক্ষকে গুলি করতে করতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ২২ বছরের তরুণ নাজমুল। তার এক চাচাত ভাই এবং এক ভাতিজাও তার সঙ্গে শহীদ হন। এ বীরত্বগাথা দেশের অনেকেই জানতো না, এমনকি তার নামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল থাকার পরও ময়মনসিংহ-শেরপুরের মানুষও তার সম্পর্কে বেশি জানে না। কারণ ৭৫’র ১৫ আগস্টের পর বিরুদ্ধ পরিবেশ।নালিতাবাড়ীর রাজাকার-আলবদরদের দোসরদের সরাসরি প্রভাব বিস্তারের ফলে শহীদ নাজমুলের পরিবারকে নানা হেনস্তার শিকারও হতে হয়। ১৯৭৭ সালে শহীদ নাজমুলের পিতা সেকেন্দার আলী তালুকদারের নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাবিরোধী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়, প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার পিতা। শহীদের পরিবারকে নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৬ বছর পার করতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস ও ত্যাগী মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করতে পদক্ষেপ নেয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান দেওয়ার উদ্যাগের অংশ হিসেবে দীর্ঘ ৪৬ বছর পরে হলেও সম্মুখসমরে জীবন দানকারী সাহসী নাজমুলকে স্বাধীনতা পদক-২০১৭ দিয়ে সম্মান জানানোর প্রক্রিয়া অবশ্যই প্রশংসনীয়। বিষয়টি অনেক দেরীতে হলেও এই পদক অনেক গৌরব ও সম্মানের। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এরকম আরও অনেক সাহসী সূর্য-সন্তানদের রাষ্ট্র একইভাবে খুঁজে বের করে সম্মান জানাবে এই আমাদের প্রত্যাশা।