১৯৭১ সালে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণে এই ভূখণ্ডের মুক্তিকামী মানুষের যখন চরম দুঃসময় চলছিল, তখন কারারুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে কাণ্ডারীবিহীন নিপীড়িত মানুষের হাল ধরার জন্য যিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন তার নাম তাজউদ্দীন আহমদ। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রবল ঝড়ে দক্ষ মাঝির মতো তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালির স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তার এই নিঃস্বার্থ ত্যাগ চিরদিনের জন্য তাকে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে দিয়েছে। ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুরের অন্তর্গত কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে বাঙালির অন্যতম এই মহান নেতার জন্ম। নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে স্ত্রী, সন্তানদের ঝুঁকির মুখে ফেলে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় শুরু থেকেই পাকিস্তানি হানাদারদের টার্গেট ছিলেন। এমনকি স্বাধীনতার পরও তিনি এদেশে থেকে যাওয়া পাকিস্তানি হায়েনাদের রোষানল থেকে মুক্ত হতে পারেননি। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ভুল বুঝাবুঝি তৈরি করে দূরত্ব তৈরি করেও তাকে হুমকি মনে করে পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা। এ কারণে ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদকেও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু ’৭৫ পরবর্তী স্বৈরাচারী সেনা সরকার এবং ১৯৯১ এর বিএনপি সরকার এই হত্যাকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং হত্যাকারীদের বিভিন্ন পুরস্কার দিয়ে নিরাপদে দেশের বাইরে পাঠানোর ক্ষেত্রে ওই সরকারগুলো ভুমিকা রেখেছে! পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ বিষয়ে দায়ের করা মামলায় কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড ও কারাদণ্ড দেয়া হলেও এখনও সব আসামীকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এটা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য একটি বড় ধরণের কলংকজনক অধ্যায় বলেই আমরা মনে করি। তাই তাজউদ্দিন আহমদের জন্মদিনের প্রাক্কালে আমাদের একটাই চাওয়া, বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত সকল আসামীকে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের প্রাপ্য দণ্ড বুঝিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে কলংকমুক্ত করা হোক। বাংলাদেশের জন্য তাজউদ্দিন আহমদের অবদান এবং তার স্মৃতির প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।