জনবহুল ও ঘটনাবহুল বাংলাদেশে বরাবরের মতো খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে দেশের আদালত। শুধুমাত্র বিচারিক কাজে তাদের দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও জনপ্রশাসন ও ভিন্ন ভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব কাজ করা দরকার, তার অনেক কিছুই পালনে মহামান্য আদালতকে স্বপ্রণোদিত হয়ে নয়তো রিট আবেদনের পরে নির্দেশ দিতে দেখা যাচ্ছে। যেমন আজকেও অনেক রিটের মধ্যে দুটি রিটের শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি আদেশ দিতে হয়েছে মহামান্য আদালতকে। ‘ট্যানারি বর্জ্য দিয়ে হাঁস- মুরগী ও মাছের খাবার বন্ধ’ ও ‘মাদারীপুরে সাংবাদিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা’ বিষয়ে আদেশ দিতে হয়েছে হাইকোর্টকে। ঘটনা দুটি বিশ্লেষণ করলে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি যে, দেশের পরিবেশ ও ফৌজদারি আইনে এই দুটি ঘটনার জন্য পদক্ষেপ নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি বাহিনী দায়িত্বপালনে সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশ হবার পরে নয়তো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের রিট আবেদনের পরে আদালতকেই পদক্ষেপ গ্রহণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এগিয়ে আসতে নির্দেশ দিতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক নানা ইস্যুসহ বেশসময় ধরেই আদালতকে এ ধরণের নির্দেশ দিতে দেখা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর দায়িত্বে শিথিলতার চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। এই শিথিলতা বিভিন্ন সময়ের সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেও দেখে থাকে দেশের জনগণ। বেতন-ভাতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বিষয়ে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর যেসব আক্ষেপ-আবেদন ছিলো অতীতে, তার অনেকটাই নেই বেতন কাঠামো উন্নয়নের মধ্য দিয়ে। কাজেই কোনোরকমের শিথিলতা ও অবহেলা গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সুপ্রিম কোর্টেও রয়েছে বহুবছরের মামলার জট, সে জট খোলার আপ্রাণ চেষ্টার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের গুরুদায়িত্বসহ নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবার প্রশংসনীয় ধারায় আছে বিচার বিভাগ। আমরা এসব কার্যধারার জন্য বিচার বিভাগকে সাধুবাদ জানাই। সেইসঙ্গে আমাদের আশাবাদ, জনপ্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে বিচার বিভাগের উপরে যেন অতিরিক্ত চাপ না পড়ে, আর স্ব স্ব বাহিনী/দপ্তর জনগণের নিরাপত্তা-সুরক্ষায় যেন তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে।