দীর্ঘ সময় পর প্রথমবারের মত দুটি দল ইউরোপীয় ফুটবলে বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। দল দুটি রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা বার্সেলোনা নয়। ম্যানচেস্টার সিটি এবং প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন (পিএসজি)। উভয় দলকেই আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত মনে হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে এপর্যন্ত নিজ নিজ ঘরোয়া লিগে পেপ গার্দিওলা ও উনাই এমেরির দলের মত কেউই খেলতে পারেনি। ম্যানসিটি এবং পিএসজি উভয়ই এরমধ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও লিগ ওয়ান ‘জিতে’ গেছে।
ইপিএলে দ্বিতীয়স্থানে থাকা নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চেয়ে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে ম্যানসিটি। আর লিগ ওয়ানে মোনাকো এবং লিওঁ’র চেয়ে ৯ পয়েন্টে এগিয়ে পিএসজি। গত ম্যাচেই প্রিমিয়ার লিগে সেরা শুরুর ইতিহাস গড়েছে ম্যানসিটি। সম্ভব্য ৩৯ পয়েন্টের মধ্য ৩৭ পয়েন্ট অর্জন করেছে গার্দিওলার দল। যার মধ্য ১২টি জয় ও একটি ড্র। মানে ১৩ ম্যাচের একটিতেও হারেনি তারা।
আগের মৌসুমে সিটির আতঙ্ক ছিল কনফিডেন্স থাকা অবস্থায়ও ভেঙে পড়া। তবে দ্বিতীয় মৌসুমেই সেই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠে গার্দিওলা দলকে একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তিনি নিজের পরিকল্পনাকে পরিপক্ব করেছেন এবং ইংলিশ ফুটবলটা ভালভাবে জানেন বলে রাহিম স্টার্লিংয়ের মত প্রতিভাবানদের সেরাটা বের করে আনতে পারছেন।
নতুন বছরে দলের মধ্যমাঠের দুই খেলোয়াড় ডি ব্রুইন ও ডেভিড সিলভার ভূমিকায় সফল পরিবর্তন এনেছেন। বেলজিয়ান-স্প্যানিশ মিলে শুরু থেকেই খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং তাদের যোগানকে সফল পরিণতি দিচ্ছেন সার্জিও আগুয়েরা ও গ্যাব্রিয়েল জেসাস। দলের অন্যান্য সমস্যা সমাধান করে দিচ্ছেন ওয়ালকার, মেন্ডি এবং ড্যানিলোরা। সব মিলিয়ে সচল একটি দল হিসেবে সিটি এখন স্বীকৃত। সাফল্যের তুঙ্গে।
কিন্তু ইউরোপিয়ান ফুটবলের আইকনিক দল বার্সেলোনা, যারা বিস্ময়কর ফুটবল উপহার দিতে সক্ষম, তারা দুই পাসের কাউন্টার অ্যাটাকে খেই হারিয়ে ফেলছে। প্যারামিটারে ওঠা-নামার মধ্যে আছে জায়ান্ট রিয়ালের পারফরমেন্স। কিন্তু নিজেদের নতুন পদ্ধতিতে খেলেই এবার ‘চ্যাম্পিয়ন’ হবে সিটিজেনরা।
গার্দিওলা, ক্লপ, কন্তে, মরিনহো এবং পচেত্তিনো মিলে অচলাবস্থায় যাওয়া ইংলিশ ফুটবলকে টেনে তোলার সংকল্প করেছেন যেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজ নিজ গ্রুপের শীর্ষে রয়েছে ম্যানসিটি, ম্যানইউ, লিভারপুল এবং টটেনহ্যাম। চেলসি আছে দুই নম্বর। তারাও পরের পর্বে প্রায় এক পা দিয়ে রেখেছে। বাঘা বাঘা সব কোচ নিয়ে আসায় এবার টেলিভিশন দরেও এগিয়ে গেছে ইপিএল। যার পরিমাণ এখন ২.৭৫৪ মিলিয়ন পাউন্ড।
ফ্রান্সে, ‘সর্বশক্তিমান’ পিএসজি অন্যদের প্রায় বেইজ্জতির শেষ সীমানায় ঠেলে দিচ্ছে। ১৪ ম্যাচে এখনও হারেনি তারা। এরমধ্যে ১২টিতে জয় ও দুটিতে ড্র করেছে নেইমার-কাভানিরা। পিএসজি স্ট্রাইকাররা গোল করেছে ৪৫টি।
নেইমার-এমবাপের পেছনে আরব শেখের বিনিয়োগ করা ৪০০ মিলিয়ন ইউরো লাভ দিতে শুরু করেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তারা কি করে সেটা দেখার অপেক্ষায় ফুটবল বিশ্ব। তবে শুরুতে নেইমার-কাভানি-এমবাপে দারুণ কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছেন। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ম্যাচ প্রতি তাদের গড় গোল ৪.৮। আর ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ৩.৩।
কোচ এমেরি একটি বিধ্বংসী আক্রমণভাগ দিয়ে প্রতিপক্ষের উপর রীতিমত রোলারকোস্টার চালাচ্ছেন। কিন্তু লিগে তার যেমন শ্রেষ্ঠত্ব, আগামী মার্চ মাসটা ইউরোপে তার সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে গত বছর বার্সেলোনার বিপক্ষে বিপর্যয়ের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজির পরিপক্বতার একটি পরীক্ষার প্রয়োজন হবে।
ইউরোপ সেরার গত ১০ আসরে ছয়বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ অথবা বার্সেলোনা। কিন্তু এবার সিটি এবং পিএসজি উভয়ই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে স্প্যানিশ আধিপত্যের জন্য হুমকি মনে হচ্ছে। দুটি দলই গ্রেট কোচ, চমৎকার ফুটবলার এবং অভিজ্ঞতা দ্বারা একত্রিত একটি প্রকল্পের সমন্বয় ঘটিয়েছে।
ফলে আগামী মার্চ পর্যন্ত যদি দল দুটি তাদের বর্তমান নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখে, তাহলে কঠিন প্রতিযোগিতামূলক দল রিয়াল এবং সচ্ছল বার্সেলোনাকে একই বিন্দুতে মিলিয়ে দেবে। অর্থাৎ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গত একদশক ধরে চলা স্প্যানিশ আধিপত্যে ভাগ বসাবে ইঙ্গ-মার্কিন ফুটবল।