হরতালের আতঙ্ক আর আশঙ্কা কেটে যেতেই লিট ফেস্টের দ্বিতীয় মুখর হয়ে উঠেছে। প্রাণ চাঞ্চল্য জেগেছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। দিনের শুরুতেই ছিল নাত-ই –রাসুলের মনোমুগ্ধকর সুর। প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ নাশিদ কামাল পরিবেশন করেন নাত।
এর পরেই শুরু হয় মূল আলোচনার অনুষ্ঠান। সকালের মূল আকর্ষণ ছিল ফিলিস্তিনি কবি ঘাসান জাকতান আর ফেডি যোধাহ’র আলোচনার মধ্য দিয়ে। আলোচনাটি সঞ্চালন করেন ব্রিটিশ সাংবাদিক জন স্নো।
আলাপের শুরুতেই জন স্নো ঘাসান জাকতান ও ফেইদি জৌদাহকে অনুরোধ করেন নিজের নিজের একটি করে কবিতা পড়ে শোনাতে। কবি জাকতান মন্দ্রিত কণ্ঠে প্রথমে আরবিতে ও পরে ইংরেজিতে তার একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। কবি জৌদাহও নিজের একটি কবিতা দর্শক শ্রোতার উদ্দেশ্যে পেশ করেন। দুটি কবিতাই ছিল ফিলিস্তিনের জীবন ও অভিজ্ঞতার অনন্য বয়ান।
এরপর আলোচনা শুরু হলে এই দুই কবিই শোনান তাদের ছেলেবেলার গল্প, উদ্বাস্তু হওয়ার অভিজ্ঞতা আর কবিতা লেখার প্রেরণার কথা।
ঢাকা লিট ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিনে আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ওয়াসাফেরির বিশেষ সংখ্যা বাংলাদেশ ইস্যুর প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয় ভাষা মঞ্চে।বাংলাদেশের সাহিত্য ও নবীন প্রতিভাধর সাহিত্যিকদের বিশ্বের সাহিত্য অঙ্গনে তুলে ধরার তাগিদেই এই উদ্যোগ নেন ঢাকা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের আয়োজকদের অন্যতম কাজী আনিস আহমেদ।
কাজী আনিস আহমেদ এবং আহসান আকবর এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ওয়াসাফেরির বাংলদেশ সংখ্যার অনলাইন ও প্রিন্ট সংখ্যা দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করেন ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
আহসান আকবর বলেন, ‘এই সংখ্যার পেছনে আছে আমাদের আমাদের যৌথ শ্রম।এই শ্রম ভালোবাসার ও প্রচেষ্টার’।
কাজী আনিস আহমেদ বলেন, ‘আমি আমার ছাত্রজীবন থেকে এই ম্যাগাজিনের প্রতি আগ্রহী। আমি পৃথিবীর অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়য়ে গিয়েছি, সবকয়টির গ্রন্থাগারে সবসময় ওয়াসাফেরি দেখেছি, পেয়েছি, পড়েছি। ওয়াসাফেরিতে বাংলাদেশের সাহিত্যকে যুক্ত করার ইচ্ছা আমার বহুদিনের।
এর আগে, ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিন মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন উইমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ডের পক্ষ থেকে জুড ক্যালি। বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তা, সাংবাদিক মুন্নী সাহা এবং পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার।
আলোচনার শুরুতে ওয়াও এর একটি প্রামাণ্যচিত্রের অংশবিশেষ দেখানো হয়। জুড ক্যালি বিশ্বজুড়ে নারীর জীবনের প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনার নানা দিক তুলে ধরার জন্যে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যান। এখানে বক্তারা উদ্যমী নারীদের গল্প যেমন বলেন তেমনি আলোচনা করেন বঞ্চিত নারীদের কথা।
এর আগে ভাষা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়, ‘ দ্য লং অ্যান্ড শর্ট অব আইটি’। এখানে অংশ নেন আরিফ হাফিজ, মুনিজে মানজুর, ইহতেশাম কবির ও সাবরিনা ইসলাম। এসময় বক্তারা তুলে ধরেন তাদের চিত্রগ্রহণের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা। নানা নানাসময় ছবি তোলার ক্ষেত্রে কি কি ধরনের অসুবিধা কিংবা আনন্দবোধ অনুভূত হয় সেগুলো ছিল বক্তাদের মূল আলোচনা।
একই সময় কেকে টি স্টেজে অনুষ্ঠিত হয় ‘এ মাল্টি ভার্স অব আইডিয়াজ’। এখানে অংশ নেন কিউবার সায়েন্স ফিকশন লেখক রকস্টার ইয়োস। আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন সাদ জেড হোসেন। আরও ছিলেন সাহিত্যিক রনবীর সিধু ও উপন্যাসিক মার্সেল থেরোক্স। বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে, বিজ্ঞান মনস্ক লেখার নানা ধরণ ও টেকনিক।
‘দ্য ট্রায়াম্প অব স্ন্যাক গডেজ’ সেশনটির জন্য অপেক্ষা ছিল সবার। কায়জার হকের অনুবাদে মনসা মঙ্গল কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচিত হয়। এর পর বইটি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন কায়জার হক। বেঙ্গল লাইটস প্রকাশ করেছে বইটি।
কেকে টি মঞ্চে ছিল ভাষা বিষয়ক অনন্য আয়োজন ‘মাদার টাং’ লেখক ও শিক্ষাবিদ মনজুরুল ইসলাম,ভারতীয় প্রাবন্ধিক কিরণ নাগরকর, মারাঠি লেখক বিনিয়ামিন, সঞ্চালনায় ছিলেন মাসরুর আরেফিন। এসময় বক্তারা সাহিত্যে মাতৃভাষার ব্যবহার ও তার অনুবাদ নিয়ে পর্যালোচনা করেন। উপস্থিত বক্তারা সবাই নিজ দেশে অনুবাদক হিসেবে সমাদৃত।
এর পরই লাইব্রেরি অব বাংলাদেশে শিরোনাম শেসনে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। মাহফুজ আনামের সঞ্চালনায় এই মোড়ক উন্মোচন আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার কামাল হোসেন। এই তিন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বের কথপোকথনে উঠে আসে তাদের বন্ধুত্ব ও বাংলাদেশের ইতিহাস।
দিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট ছিল বর্ধমান হাউসে পরিবেশিত ‘আনপ্লাগড’। এখানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন আরমিন মুসা ও জয়িতা খান।
এর আগে অনুষ্ঠিত হয় ‘ইটস অ্যা শি থিংস’। এখানে একদল তরুণী তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার ও অনুভূতির কথা দর্শকদের সঙ্গে শেয়ার করেন।
দিনে শেষের সবচেয়ে আকাঙক্ষিত শেসন ছিল ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক শোভা দে’র আলোচনা। সঞ্চালনা করেন, অন্তরা গাঙ্গুলি। সেখানে তিনি নারীবাদ নিয়ে আলোচনা করেন। নারীদের অবস্থান ও বাস্তবতা নিয়ে তিনি সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দেন। নিজস্ব অভিমত তুলে ধরার পাশাপাশি ভারত সরকারের সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে তিনি যে টুইট করেন সেটি নিয়েও আলোচনা করেন।
একই সময় ভাষা মঞ্চে কবি শামিম রেজার সঞ্চালনায় কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ছিলেন নিজের জীবন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে।