যুক্তরাজ্যের লন্ডন ব্রিজ ও বরোহ্ মার্কেটে সন্ত্রাসী হামলা ইস্যুতে দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টি। সারাদিনের তদন্তে ঘটনার বিস্তারিত জানার পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শুধু এই দলটি প্রচারণা বন্ধ রাখার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিলেও অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও রোববার দিনব্যাপী প্রচারণাকাজ চালাবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন আগামী ৯ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর মাত্র ৪দিন আগে এমন একটি হামলার ঘটনা ঘটায় নির্বাচনের দিনের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। তবে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান নিশ্চিত করেছেন, এতে নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। নির্বাচনের তারিখও পেছাবে না।
এ সন্ত্রাসী হামলা বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সরকারের জরুরি প্রতিক্রিয়া কমিটি ‘কোবরা’র জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। রোববার স্থানীয় সময় সকালে অনুষ্ঠিতব্য ওই বৈঠকে সাদিক খানও অংশ নেবেন।
লন্ডন স্থানীয় সময় শনিবার রাতে ওই হামলায় তিন হামলাকারীসহ ১০ জন নিহত হয়। লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস কমপক্ষে ৪৮ জনের আহত ব্যক্তিকে ৫টি হাসপাতালে স্থানান্তরের খবর নিশ্চিত করেছে। এটি গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে তৃতীয় সন্ত্রাসী হামলা।
বিবিসি জানায়, যুক্তরাজ্যের লন্ডন ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১০টার কিছু পরে (বাংলাদেশ সময় রোববার ভোর ৪টার দিকে) একটি বড় ভ্যান জাতীয় গাড়ি দিয়ে প্রথম হামলা চালানো হয়। গাড়িটি ফুটপাতে পথচারীদের ওপর তুলে দিলে সঙ্গে সঙ্গে অন্তত একজন পথচারীর মৃত্যু হয়। ওই সময় আহত হয় আরও কয়েকজন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসি’কে জানিয়েছে, হামলাকারী তিনজন ছিল। ভ্যান পথচারীদের ওপর তুলে দিয়ে ওভাবেই সেটিকে তারা বরোহ্ মার্কেটের দিকে চালিয়ে নিতে থাকে। এভাবে কিছুক্ষণ চালানোর পর হামলাকারীরা তিনজনই হাতে ছুরি নিয়ে লাফিয়ে গাড়ি থেকে নামে এবং আশপাশে থাকা লোকজনকে ছুরিকাঘাত করতে থাকে।
প্রথমে ছুরিকাঘাতে আহতদের একজন ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ সদস্য বলে জানিয়েছে টেলিগ্রাফ। জরুরি সাহায্যের জন্য ফোন পাবার পর প্রথম তিনিই ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে ছুরির আঘাতে আহত হন। তার মাথা, মুখমণ্ডল এবং পায়ে গুরুতর আঘাত থাকলেও তা মারাত্মক নয় বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।
গাড়ি এবং ছুরি হামলা ছাড়াও লন্ডন ব্রিজে একটি বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। তবে সেটি ছিল অল্প জায়গা জুড়ে।
সন্ত্রাসীরা ছুরি দিয়ে হামলা চালাতে চালাতে লন্ডন ব্রিজ থেকে বরোহ্ মার্কেট এলাকার দিকেই এগিয়ে যায় বলে জানান বিবিসি’র সংবাদদাতা টম সিমন্ডস। সেখানেও ছুরি নিয়ে হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে পৌঁছেই পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীদের লক্ষ্য গুলি ছুঁড়তে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কারও কারও মতে, তারা পুলিশের গুলিতে একজন হামলাকারীকে নিথর অবস্থায় দেখেছেন। সম্ভবত সে মারা গিয়েছিল। আরেক হামলাকারীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখলেও সে তখনো জীবিত ছিল বলে তাদের ধারণা। পরে সে মারা গেছে বলে নিশ্চিত করে পুলিশ।
পুলিশের গুলিতে পরে বরোহ্ মার্কেট এলাকায় তৃতীয় হামলাকারীও মারা যায় বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান। হামলাকারীদের গায়ের সঙ্গে বড় কৌটার মতো কিছু জিনিস আটকানো ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত গ্যাব্রিয়েলে শিয়োটো’র তোলা ছবিতে মাটিতে পড়ে থাকা হামলাকারীদের একজনের বুকের সঙ্গে বোমাসদৃশ বস্তু দেখা যায়।
তবে জিনিসগুলোকে আসল বলে মনে হয়নি বলে জানান শিয়োটো। বস্তুগুলো বোমা নয়, বোমার মতো লাগিয়ে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশও পরীক্ষা করে নিশ্চিত করেছে।
গত ২২ মে ম্যানচেস্টারে মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী আরিয়ানা গ্রান্ডের পপ কনসার্টে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২২ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও ছিল। ওই ঘটনায় আহত হয় আরো ৬৪ জন।