বাসাবাড়িতে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভবনের মালিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পেনাল কোডের ২৬৯ এবং ২৭০-এর আওতায় কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাদের জেল-জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
মশা নিধন ও বিস্তার রোধে ডিএসসিসির এ উদ্যোগ কতটা কাজে আসবে বা এতে নাগরিক ভোগান্তি বাড়বে কিনা সে বিষয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এ ধরনের উদ্যোগ জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করলেও এমন কোন উদ্যোগ নেওয়া উচিত হবে না যাতে নাগরিক ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। এই অভিযানের পাশাপাশি মশা নিধনে আরও বড় আকারে কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরামর্শ তাদের।
যদিও ডিএনসিসি মনে করছে এ কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বাড়তি সচেতনা তৈরি হবে। এ ব্যাপারে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাহউদ্দীন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা। সব বাসা-বাড়িতে তো যাওয়া সম্ভব নয়, প্রতিদিন হয়তো অঞ্চলভেদে পাঁচ-দশটি বাড়িতে যাবে মোবাইল কোর্ট।
এ ধরণের অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে নাগরিকদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাওয়া যাবে কিনা বা নাগরিকদের প্রাইভেসি লঙ্ঘনের আশঙ্কা থাকছে কিনা, এ ব্যাপারে তিনি বলেন, মোবাইল কোর্টতো একটা কোর্টই। সুতরাং কোর্ট যদি বাসা-বাড়িতে ঢুকতে চায় তাহলে তো ঢুকতে দিতেই হবে। তা না হলে তো আদালত অবমাননা হবে।
‘‘তবে কোন বাড়িতে যদি লোকজন না থাকে বা তত্ত্বাবধায়ক বা কাজের লোক থাকে, সেক্ষেত্রে কোর্ট নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন।’’
তিনি বলেন, কোন বাড়িতে দেখা গেল বাড়িওয়ালা ছাদে বা বারান্দায় টব ফেলে রাখছেন, যেখানে পানি জমে আছে, বা ট্যাঙ্কির পাশে স্বচ্ছ পানি জমে আছে। আমাদের এক্সপার্টরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি দেখে যে এর মধ্যে মশার লার্ভা আছে, তখন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কোর্ট যদি প্রমাণ না পায় তাহলে তো কোন সমস্যা নেই।
‘‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে সচেতন করা বিষয়টির গুরুত্ব বোঝানো। আর জেল-জরিমানার ব্যাপারটি হচ্ছে শেষ কথা।’’
এডিশ মশা নিধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাহউদ্দীন বলেন, ১৯৯৬ সালে এদেশে এডিশ মশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এই একই মশা ডেঙ্গুর জন্য দায়ী আবার চিকুনগুনিয়ার জন্যও দায়ী। আরও কিছু রোগ এ মশার মাধ্যমে ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং এখনই এ মশার বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন হতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সিটি কর্পোরেশনের এ ধরণের উদ্যোগ জনসচেতনা বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখলেও এমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত হবে না যাতে জনভোগান্তি তৈরি হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. এসএম শামসুজ্জামান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে এ ধরণের উদ্যোগ হয়তো ভুমিকা রাখতে পারে। কিন্তু এমন কোন ব্যবস্থা সিটি কর্পোরেশনের নেওয়া উচিত হবে না যাতে জনগণের মাঝে ভোগান্তি সৃষ্টি করে।
মশা নিধনের জন্য আরও বড় কর্মসূচি গ্রহনের পরামর্শ দিয়ে এ মাইক্রোবায়োলজিস্ট বলেন, মশার বিস্তার রোধে আরও বড় উদ্যোগ নিতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে। রাস্তা-ঘাট নালা নর্দমার পাশে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিটি এলাকায় মশানাশক স্প্রে করতে হবে এবং বিচ্ছিন্নভাবে না করে যে এলাকায় এ ধরনের অভিযান হবে সে এলাকার প্রতিটি জায়গায় যাতে করা যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং পর্যায়ক্রমে নগরের প্রতিটি জায়গায় তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
আগামী ৮ এপ্রিল থেকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালিত হবে বলে আগেই জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি মেয়র মোহাম্মদ সাইদ খোকন। এর আগে মিডিয়ায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করে জনগণকে সচেতন করা হবে বলেও জানান তিনি।
গত সোমবার ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ আয়োজিত ‘মশকবাহিত রোগ প্রতিরোধ ও মশক নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেছিলেন, ‘বাসাবাড়ি বা বাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত টায়ার বা কনটেইনারে স্বচ্ছ পানি জমে থাকলে পরিচ্ছন্ন রাখতে আগামীকাল(মঙ্গলবার) থেকে সংবাদমাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।একই সঙ্গে ১ লাখ ৬৫ হাজার বাসাবাড়িতে সচেতনতামূলক গণবিজ্ঞপ্তি পৌঁছে যাবে। প্রত্যেক বাড়ির মালিককে এই গণবিজ্ঞপ্তি বা নোটিশ জারি করা হবে। নোটিশে উল্লেখ থাকবে ভবনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন, কোনোক্রমে কোনো অবস্থাতেই যেন এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র না থাকে, এটা নিশ্চিত করবেন।’
এডিস মশা নির্মূলে নিয়মিত এ কার্যক্রম ২০ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং ৮ এপ্রিল ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।