ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়ের টাটকা স্মৃতি নিয়েই বিশ্বকাপে ‘মহাগুরুত্বপূর্ণ’ ম্যাচে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কয়েকঘণ্টা পরই অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে টাইগাররা। সেমিফাইনালের স্বপ্ন উজ্জ্বল করার জন্য জয়ের বিকল্প নেই বাংলাদেশের।
বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের ৫ ম্যাচ থেকে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে আছে অস্ট্রেলিয়া। সমান ম্যাচে দুটি করে জয়-পরাজয় ও একটি পরিত্যক্ত ম্যাচের পর ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পাঁচ নম্বরে অবস্থান বাংলাদেশের।
কোনো সমীকরণ ছাড়াই সেমিফাইনালে যেতে হলে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততে হবে বাংলাদেশকে। অন্যদিকে আফগানিস্তান, পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতার পাশাপাশি অ্যারন ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া ও বিরাট কোহলির ভারতের মধ্যকার দুটি ম্যাচের একটি জিতলেও সম্ভাবনা থাকবে মাশরাফীর দলের। ফলে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চাপ কমিয়ে সেমির দৌড়ে এগিয়ে যেতে মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য অস্ট্রেলিয়ার। ফলাফল হওয়া ১৯টি ম্যাচের ১৮টিতে জিতেছে অজিরা। বাংলাদেশের একমাত্র জয়টি ইংল্যান্ডের মাটিতেই। ১৪ বছর আগে কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে তখনকার বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মাটিতে নামিয়ে এনেছিল টাইগাররা।
অনুমিতভাবেই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সও কথা বলছে অস্ট্রেলিয়ার হয়েই। বিশ্বকাপে তিনবারের সাক্ষাতে দুবার জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। অন্য ম্যাচে জয় হয় বৃষ্টির। অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যকার সর্বশেষ দুটি ম্যাচেই জয় হয়েছে বৃষ্টির। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০১৫ বিশ্বকাপের ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের একটি বোঝাপড়াও রয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে নিরাপত্তার ঠুনকো অজুহাতে বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। কয়েকবার পিছিয়ে অবশ্য সফরে এসেছে। তখন টেস্টে জয় তুলে নিয়েছে লাল-সবুজরা। বিশ্বমঞ্চে অজিদের হারিয়ে দেখিয়ে দেয়ার দারুণ সুযোগ পাচ্ছে মাশরাফীর দল।
অতীত পরিসংখ্যান ও বিশ্বকাপের অতীত ইতিহাস অস্ট্রেলিয়াকে অনেকটা এগিয়ে রাখছে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ৩২১ রান তাড়া করে বড় জয় পাওয়া বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আত্মবিশ্বাসী হয়েই নামবে। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও ডেভিড ওয়ার্নাররা দারুণ ছন্দে থাকলেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ভরসার অন্যতম নাম সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে স্বপ্নিল সময় পার করছেন টাইগার অলরাউন্ডার। ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরির তৃপ্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নামবেন সাকিব।
টাইগারদের মুখোমুখি হওয়ার আগে সাকিবকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। বলেছেন, ‘সে (সাকিব) সম্ভবত বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার এবং বাঁহাতি স্পিনার।’
অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে বাংলাদেশকে শক্তি জোগাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রায় ৯ ওভার হাতে রেখে ৩২১ রান তাড়া করে জয়ের টাটকা স্মৃতি। শর্ট বলে বাংলাদেশকে ঘায়েল করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিল ক্যারিবিয়ানরা। সেই শর্ট বলগুলোকে একে একে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে সাকিব-লিটনরা যেন জানিয়ে দিয়েছেন, এই বাংলাদেশ আগের বাংলাদেশ নয়। অস্ট্রেলিয়াও শর্ট বলে টাইগারদের ঘায়েল করতে চাইবে। অজিদের মোকাবেলার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে আদর্শ প্রস্তুতি সেরে রেখেছে বাংলাদেশ।
নজর থাকবে যাদের উপর
সাকিব আল হাসান: ৬৪, ৭৫, ১২১ ও ১২৫* -বিশ্বকাপের চার ইনিংসে সাকিব আল হাসানের রান। এমন ব্যাটসম্যানকে ভয় না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্পিনেও সমান মুন্সিয়ানা দেখিয়ে চলেছেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হুমকি হয়ে উঠতে পারেন এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী টাইগার। চার ম্যাচে ৫ উইকেট, দুটি সেঞ্চুরি ও সমান হাফসেঞ্চুরি- পরিসংখ্যানই কথা বলছে সাকিবের হয়ে।
সাকিবের স্পিন মোকাবেলার জন্য বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছে অস্ট্রেলিয়া। একারণেই নেটে স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগারকে দিয়ে প্রস্তুতি সেরেছেন ডেভিড ওয়ার্নাররা। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশে খেলার অভিজ্ঞতা থাকায় অজিদের বিপক্ষে বাড়তি সুবিধা পাবেন সাকিব। আরেকটি সাকিবময় ম্যাচ দেখার অপেক্ষা করতেই পারে বাংলাদেশ।
মিচেল স্টার্ক: বিশ্বকাপে কমপক্ষে ২০ উইকেট নিয়েছেন এমন বোলারদের মধ্যে স্টার্কের গড় (১৩.৫১) এবং স্ট্রাইকরেট (১৮.০) সবার সেরা। প্রতি ম্যাচে গড়ে ২.৫ উইকেটের বেশি নিয়েছেন এ অস্ট্রেলিয়ান গতিদানব। ওভারপ্রতি খরচ করেছেন মাত্র ৪.৩০ রান। চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত স্টার্ক নিয়েছেন ১৩ উইকেট। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন ধসিয়ে দিতে পারেন স্টার্ক।
টিম নিউজ
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হার না মানা ৯৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলা লিটন দাস একাদশে জায়গা ধরে রাখবেন। হাইস্কোরিং ম্যাচ বিবেচনায় মোসাদ্দেককে বসিয়ে রুবেল হোসেনকে খেলানোর সম্ভাবনা নেই। তবে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের চোট থাকায় সুযোগ মিলতে পারে রুবেল হোসেনের।
মার্কাস স্টয়নিস ইনজুরি কাটিয়ে ফেরায় শন মার্শকে বেঞ্চে বসতে হতে পারে। শ্রীলঙ্কা ম্যাচে বিশ্রামে থাকা নাথান কোল্টার-নাইল টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুর্দান্ত নৈপুণ্য উপহার দিয়েছিলেন। কেন রিচার্ডসনের জায়গায় একাদশে ফিরতে পারেন কোল্টার-নাইল।
সম্ভাব্য একাদশ
বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন/রুবেল হোসেন, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ও মোস্তাফিজুর রহমান।
অস্ট্রেলিয়া: অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাজা, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, শন মার্শ/মার্কাস স্টয়নিস, অ্যালেক্স কারি, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, নাথান কোল্টার-নাইল ও অ্যাডাম জাম্পা।