‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’ বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। ১৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১৭ রোববার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। রুহুল কবির রিজভী আরো বলেছেন, ‘বেগম জিয়ার সাজা হবে। কিন্তু তিনি কী করেছেন? খালেদা ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। আর যদি হয় তাহলে সেটা প্রতিহত করা হবে’- বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বিএনপি’র মহাসচিব কখরুল ইসলাম আলমগীর, তাঁর দলের বড় বড় কিছু নেতা এমন হুংকার দিচ্ছেন।
গত কয়েকদিন ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছিলেন তাঁরা। পরে বিএনপি’র মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর আর ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দু’জনেই বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে যারা নির্বাচনের কথা ভাবছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন’। ওদিকে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ ই-ভোটিং নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব দুরভিসন্ধিমূলক’।জনাব দুদু বলেন, ‘দেশের জনগণের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থার জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে। প্রয়োজনে বিএনপি রাস্তায় নামবে’ বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারনণ করেন দুদু।
‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি’ উপলক্ষে এ মানববন্ধনে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের ইস্যুতে সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে হাইকোর্ট দেখাচ্ছে’। জনাব দুদু আরো বলেন, ‘আমি সরকারকে বলবো, নির্বাচনের ইস্যুতে সংবিধানে দোহাই না দিয়ে সহায়ক সরকার নিয়ে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করুন’। সহায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে দলের নেতারা। তারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে যাবে না। খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন তারা। তবে দশম সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবারের পরিস্থিতি বিএনপির জন্য বেশ ঘোলাটে তা কি তারা বুঝে ফেলেছেন।
এই খবর পড়ে আমার মনে কয়েকটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্নগুলো হচ্ছেঃ
১। বিএনপি ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবী করেছে তাঁদের ভাষায় একটা অনির্বাচিত অবৈধ সরকারের কাছে। অবৈধ সরকারের সব কাজ আইনের চোখে অবৈধ হবার কথা, আইনে তাই বলে। তাহ’লে তারা এই অবৈধ দাবী করছেন কেন?
২। অবৈধ সরকার কর্তৃক নির্বাচিত বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির প্রতি তাঁদের হঠাৎ এই আস্থা কেন? তিনি কেন অবৈধ নন?
৩। বিএনপি নেতারা কী করে জানলেন যে, খালেদা জিয়ার জেল হবে? তাহলে কী খালেদা জিয়া অপরাধী তা তাঁদের দলের বাঘা বাঘা উকিল, ব্যারিস্টার সাহেবগন সবাই জানেন?
৪। খালেদা জিয়ার অংশগ্রহন ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করা হবে বলে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলে হচ্ছে। এটা কি বিএনপি’র গনতান্ত্রিক আচরণ?
৫। কাউকে ভোট দিতে না দেওয়া কি ভোটাধিকার প্রয়োগে বাঁধা দেওয়া নয়? এটা কি মৌলিক অধিকার পরিপন্থী নয়?
৬। বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন না করলে এবং একই সাথে জ্বালাও পোড়াও, হামলা, ভোট কেন্দ্রে আগুন দেওয়া, মানুষ হত্যার মাধ্যমে ভোটারদের ভোট বর্জনে বাধ্য করলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কী করে?
৭। ভোট দিতে যাবার সময় কোন ভোটারকে ভোট দিতে বাঁধা দিলে বা ভোটারের উপর হামলা করলে ভোটাররা পাল্টা হামলায় গেলে সেটা বাংলাদেশের দন্ডবিধির ৯৬ আর ৯৭ ধারায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের যে উল্লেখ আছে সেই আইনের পর্যায়ে পড়বে কি?
৮। জনগনের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে এবং একই সাথে জ্বালাও পোড়াও, হামলা, ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া, মানুষ হত্যার মাধ্যমে ভোটারদের ভোট বর্জনে বাধ্য করলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বাহিনীর (পুলিশ, বিজিবি, ইত্যাদি) কি বসে বসে দেখা উচিৎ?
৯। বিএনপি কি হতাশা থেকে এটা করছে? নাকি পদ্মা সেতুর দুর্নীতি হয়েছে বলে তাঁদের যে বিশ্বাস ছিল তাতে কানাডিও আদালতের রায়ের পরে কি বিএনপি’র নেতাদের মাথা আউলায়ে গেছে?
১০। তারেক জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না, সেটা থেকেই কি এই বর্জনের কথার উৎপত্তি?
১১। বিএনপি’র মাঝে কি একদল সরকারের দালাল তৈরী হয়েছে যারা খালেদা জিয়াকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওয়াক অভার দিতে চাচ্ছে?
১২। মাঠ জরিপে কি জনগনের মাঝে বিএনপি’র অবস্থা খুব খারাপ এসেছে, সাম্প্রতিক হয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের ফলের মতো?
১৩। বিএনপিকে কি বড় কোন সম্মানী লোক বা বুদ্ধজীবিদের কেউ বিশেষ ব্যবস্থায় ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তাসহ নতুন কোন ফর্মুলা দুয়েছে?
১৪। জামায়াত নির্বাচনে যেতে পারবে না সেই কষ্ট থেকে বা জামায়াত প্রভাবিত হয়ে কি বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে ‘চাপাতি আন্দোলনের’ কথা ভাবছে?
১৫। পাকিস্তানের কাছ থেকে কি কোন কেরামতির বা সহায়তার আশ্বাস পেয়েছে বিএনপি?
নাকি
১৬। জেল জুলুমের ভয় পেয়েছেন নেতারা বা বর্তমান সরকারের উন্নয়নে গতি দেখে ভয় পেয়েছে?
এমন অনেক প্রশ্ন আমাদের মতো অনেক মানুষের মনের জানালায় উঁকি দিচ্ছে। এর জবাব পাওয়া আমাদের মতো মানুষের জন্য খুব জরুরী। তবে বিএনপি এই নির্বাচনে গেলে ভালই হবে, কিছু তরুণ তাজা প্রাণ বেঁচে যাবে। ভালো থাকবে বেশ কিছু ভোটকেন্দ্র তথা স্কুল ঘর, বাংলার মানুষের মনে ভোটের সময় কোন উৎকণ্ঠা থাকবে না। আবার নির্বাচনে না গেলেও ভালো, বর্তমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
অনেকে বলেছেন, বিএনপি বাংলার ইতিহাসে নতুন করে নাম লেখাতে চায়। কিন্তু তা কীভাবে সেটাই এখন দেখা বিষয়।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)