বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা ধরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ও সরকারপন্থীদের খোঁজ করছে তালেবানরা – এমনটা জানিয়েছে জাতিসংঘকে গোয়েন্দা তথ্য দেয়া নরওয়ের একটি সংগঠন। তালিকায় থাকাদের ধরে নিয়ে মেরে ফেলা হতে পারেও আশঙ্কা তাদের।
আফগান বিভিন্ন শহরে তালেবানবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর তালেবানরা গুলি চালিয়েছে বলেও জানা গেছে। মানবতার স্বার্থে আফগানিস্তানের জন্য আর্থিক সহায়তা আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
কাবুল দখলে নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই তালেবানরা আশ্বাস দিয়েছিলো, আগের সরকার ও বিদেশি বাহিনীর হয়ে যারা কাজ করেছেন তাদের ক্ষতি করা হবে না। তবে নরউইজিয়ান সেন্টার ফর গ্লোবাল অ্যানালাইসিসের পর্যবেক্ষণ ভিন্ন। জাতিসংঘকে দেয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সংগঠনটির দাবি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের খোঁজ করছে তালেবানরা। বিশেষ করে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের খোঁজা হচ্ছে। নিজেদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে নতুন গুপ্তচরও নিয়োগ দিচ্ছেন তালেবানরা।
তালেবানদের প্রতিশোধমূলক সহিংসতার খবরে উদ্বেগ জানিয়েছে জি-সেভেনের সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। যারা আফগানিস্তান ছাড়তে চায় তাদের নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি ধরে রাখতে তালেবানদের আহ্বান জানিয়েছে জি-সেভেন।
কিন্তু কাবুল বিমানবন্দরে এখনও করুণ চিত্র। হাজার হাজার মানুষ আফগানিস্তান ছাড়ার অপেক্ষায়। এর মধ্যে যারা আফগান নাগরিক তাদের কাগজপত্র যাচাইয়ে সময় চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে সময় স্বল্পতা। অনেক ফ্লাইটই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি আরোহী নিয়ে ফিরছে। রোববার থেকে কাবুল বিমানবন্দরে ফ্লাইটে ওঠার হুড়োহুড়িতে কমপক্ষে ১২ জন মারা গেছে বলে দাবি করছে তালেবানরা। তবে এসব মৃত্যুর দায় কোনোভাবেই নিজেদের ওপরে নিতে রাজি নয় তালেবানরা।
আফগানিস্তানের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। কমপক্ষে আরও ৮০ কোটি ডলারের ঘাটতি আছে বলে জানিয়েছে সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে আফগানিস্তানে অর্থসহায়তা দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
২০ বছর পর আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার সাথে সাথেই সেখানে অস্থিরতা তৈরি হয়। গত ১৫ আগস্ট পুরোপুরি দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবানরা। সবার আশঙ্কা, ২০০১ সালে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে আফগানিস্তানে যেসব মানবাধিকার অর্জন করা গিয়েছিল এখন তা আবার হারিয়ে যাবে।
১৯৯০ সালে তালেবান নিয়ন্ত্রণাধীন জীবনে নারীদের পুরোপুরি বোরকা পরতে বাধ্য করা হতো। ১০ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের জন্য শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিলো এবং প্রকাশ্যে ফাঁসিসহ নৃশংস শাস্তির ব্যবস্থা ছিলো।