সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বরুণাই যেখানে কথা রাখেনি, সেখানে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা কোন দুঃখে বাণিজ্যমন্ত্রীকে দেয়া কথা রাখবে? তাদের উদোর ভর্তি করবে আগে, তারপর জনগণকে চুষে খাবে। ওইসব মন্ত্রী-ফন্ত্রী গোনার সময় আছে তাদের?
গত ১৩ মে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন ব্যবসায়ীরা। বৈঠকে মন্ত্রী রোজার মাসে ব্যবসায়ীদের বলেছিলেন নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক রেখে সহনীয় পর্যায়ে লাভ করতে।
কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর সেই লাভ শব্দটি ইংরেজিতে ষড়াব হয়ে গেছে। আর তাতেই যত ঝামেলার সৃষ্টি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভালোবাসার কবিতা- কেউ কথা রাখেনি-র বরুণার মত অসহনীয় কষ্ট দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। নইলে মূল্য বাড়িয়ে মানুষকে এত কষ্ট দেবেন কেন তারা? সুনীল বাবুকে কষ্ট দিয়েছিল বরুণা।
ভালোবাসার জন্য দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে লাল কাপড় বেঁধেছিল সুনীল। ‘বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছিল ১০৮ টি নীলপদ্ম। তবু কথা রাখেনি বরুণা…’
আর আমাদের অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের চোখে লাল কাপড় বাঁধবে কার বাবার এমন সাধ্য আছে? সেখানে ষাঁড়তো একটা নিরীহ প্রাণী, তার চোখে লাল কাপড় বাঁধা কোনো ব্যাপারই ছিল না সুনীলের জন্য। আর আমাদের মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষমতার অধিকারী একেকজন। বললেও বোধহয় খুব একটা বেশি বলা হবে না। কারণ একেকজনের রাজনৈতিক কানেকশন খুব ভাল। তাই তো ওইসব মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা এক কান দিয়ে শুনেছে আর অন্য কান দিয়ে বের করে দিয়েছে। তা না হলে কেন রোজার দুএকদিন আগে জিনিসপত্রের দাম এভাবে বাড়িয়ে বলবে চাঁদাবাজি আর বৈরী আবহাওয়াই এর কারণ।
আসল কারণ হচ্ছে- পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে রোজার পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অতি মুনাফালোভীরা। তা না হলে কেন প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়ে পঞ্চাশ থেকে বায়ান্ন টাকা হবে? যেটা এক সপ্তাহ আগেও ছিল প্রতি কেজি চল্লিশ টাকা। চায়না রসুন এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯০ থেতে ৯৫ টাকা কেজি, এখন সেটা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বেড়েছে চিড়া-মুড়ি-ছোলা-খেসারি ডাল। বেড়েছে চিনি বেগুন পেঁপে আলুসহ অন্যান্য সবজির দামও।
এমতাবস্থায় সরকারকে জোরদার করতে হবে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা। নইলে অতি মুনাফালোভীরা সুন্দর সুন্দর কথা বলে কামিয়ে নেবে শত শত কোটি টাকা।
শুরু হচ্ছে রোজা। এ রোজায় সব শ্রেণির মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে যেন থাকে জিনিসপত্রের দাম, সেদিকে সরকারের সংস্থাগুলোর সুদৃষ্টি আর নজরদারিই যথেষ্ট।
সুনীলের বরুণা কথা না রাখুক আমাদের সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী যেন তাঁর কথা রাখেন। তিনি বলেছেন, দেশে প্রচুর খাদ্য মজুত আছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণ নেই। একটা মাস যেন সুন্দরভাবে রোজা পালনের কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখেন- এরকম কামনা দেশবাসীর।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)