আগামী ফেব্রুয়ারিতেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্তরে পৌঁছে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সভা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় সূচকে বাংলাদেশে এগিয়ে আছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় অ্যাসেসমেন্ট সভা হবে। আশা করি সেই সময় আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসব এবং পরবর্তী স্তরে (উন্নয়নশীল) পৌঁছে যাবো। ফেব্রুয়ারির সিডিপির বৈঠক থেকে বাংলাদেশের গ্রাজুয়েশনের বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে অর্থাৎ এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন অর্জন করতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তিনটা ক্রাইটেরিয়াই (শর্ত) পূরণ করেছি। এবার দ্বিতীয় অ্যাসেসমেন্ট। সুতরাং এবার আমরা নিচু স্তর থেকে উঁচু স্তরে উত্তরণ ঘটাতে পারব। আমি আশাবাদী যে আমরা অর্জন করতে পারব।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে কীভাবে একটি দেশ উন্নত অবস্থানে যায়- জাতিসংঘের সেই নিয়ম প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোনো স্বল্পোন্নত দেশকে উন্নত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখভাল করে জাতিসংঘের সংস্থা সেন্টার ফর ডেভলপমেন্ট পলিসি- সিডিপি। তাদেরকে কোনো দেশের ইচ্ছার কথা জানালে তারা ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বসে। তাদের পরামর্শ মতে একটা দেশকে নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তরে নিয়ে আসা হয়। পরপর দুইটি ত্রিবার্ষিক সভায় ভালো ফলাফল আসলে পরেই ঘোষণা দেয়া হয়।
সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। যেমন- কোনো দেশের মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক (পুষ্টি, স্বাস্থ্য, মৃত্যুহার, স্কুলে ভর্তি ও শিক্ষার হারের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়) এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক (প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আঘাত, জনসংখ্যার পরিমাণ এবং বিশ্ববাজার থেকে একটি দেশের দূরত্বসহ আটটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়)।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০১৮ সালে ভালো করেছে। এবারও এসব সূচক ভালো। তাই বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটানোর সম্ভাবনা বেশি। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের জন্য একটি দেশকে কমপক্ষে ৩২ পয়েন্ট অর্জন করতে হয়। এখানে আমাদের পয়েন্ট ২৭ দশমিক ৮। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ পয়েন্টের বেশি থাকতে হবে। আমাদের আছে ৭৫ পয়েন্ট। একটি দেশের মাথাপিছু আয় থাকতে হবে ১২১০ ডলার। আমাদের আছে ১৬৪০ ডলার। সব মিলিয়ে আমাদের অবস্থান ভালো।
জাতিসংঘ ১৯৭১ সালে কিছু নির্ণায়কের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি হিসেবে পৃথকভাবে শ্রেণিবদ্ধ করে।
সভাশেষে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু সালেহ মোস্তফা কামাল জানান, আজকের বৈঠকে ৫টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট অর্থের পরিমাণ হবে ৬০৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার ৫৬৮ টাকা। এর মধ্যে ৫৯৪ কোটি ৭১লাখ ৮৩৪ টাকার যোগান দেবে সরকার। আর বিশ্ব ব্যাংক ঋণ হিসেবে দিবে ১৩ কোটি ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৩৪ টাকা।
তিনি জানান, খাদ্য অধিদপ্তরকে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থ বছরে সিঙ্গাপুরের এমএস এগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে ১৩৮ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ টাকায় ৫০ হাজার টন গম কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি টনে খরচ হবে ৩২৬ দশমিক ৯২ ডলার। ডলারের বিনিময় হার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা ধরে প্রতি কেজি গমের দাম দাঁড়াবে ২৭ টাকা ৭২ পয়সা।
ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে জিটুজি ভিত্তিতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ১০৭ কোটি ৭২ লাখ টাকায় ৩০ হাজার টন ডিজেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বৈঠকে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির ‘পল্লী জনপদ নির্মাণ’ প্রকল্পের পূর্তকাজের জন্য বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ ৮০ হাজার টাকার দরপ্রস্তাব ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীন ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডেটাবেইজ এনএইচডি প্রকল্পের পরামর্শক সেবার জন্য জেরন ইন্ডিয়া, আইওই বাংলাদেশ ও জার্মানির টিওপি ইমেজ সিস্টেমের জয়েন্ট ভেঞ্চারের কাছ থেকে সেবা কেনার ভেরিয়েশন ব্যয় হিসেবে অতিরিক্ত ১৩ কোটি ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৩৪ টাকার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিটি।
এছাড়া সচিবালয়ের ২০তলা নতুন অফিস ভবন নির্মাণে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের কাজ ১৯৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৪ টাকায় দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিডেট, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স ও বঙ্গ বিল্ডার্সের জয়েন্ট ভেঞ্চারকে দেয়া হয়েছে।