কয়েক বছর ধরেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ করে আসছিলেন অভিভাবকরা। তাদের সেই অভিযোগ আরও শক্ত হয় যখন দেখা যায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার হলে দেয়া প্রশ্নের হুবহু মিল। এতে অনেকেই নিশ্চিত হন অভিভাবকদের অভিযোগ ভিত্তিহীন নয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে, বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই অভিযোগ শুরু থেকেই দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করে। যে কারণে তার কোন প্রতিকার হয়নি। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জড়িতরা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ওই সময়টায় অন্য পাবলিক পরীক্ষাগুলোও (মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা) এই অভিযোগের বাইরে ছিল না। চলমান মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, এ পরীক্ষায় কমপক্ষে দুটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এরইমধ্যে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার হলে দেয়া প্রশ্নের হুবহু মিল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এবার প্রশ্ন ফাঁসের প্রথম অভিযোগ উঠে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষায়। এরপর গণিত (আবশ্যিক) বিষয়ের পরীক্ষার আগেই যে প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তার সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পুরোটাই মিলে যায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়ের সেই চিরাচরিত উত্তর: প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, শিক্ষকদের সাজেশন থেকে কয়েকটি প্রশ্নতো মিলে যেতেই পারে। তাদের দাবি, যদি তা হয়েও থাকে সেটা হয়েছে জেলা প্রশাসনের ট্রেজারি থেকে। আমরা জানি, নিয়মানুযায়ী বিজি প্রেসে একাধিক সেট প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে পরীক্ষার কয়েকদিন আগে তা জেলায় জেলায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে পরীক্ষার তিন দিন আগে প্রশ্নপত্র উপজেলায় নিয়ে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরীক্ষার দিন সকালে কেন্দ্রসচিব ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সিলগালা করা প্রশ্নপত্রের প্যাকেট নিয়ে যান পরীক্ষা কেন্দ্রে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলতে চাইছে, এই কয়েকটি ধাপের কোন একটি ধাপ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সম্ভাবনা থাকে। সেখানে তাদের দায় নেই। কিন্তু এভাবে কি তারা দায় এড়াতে পারে? আমরা লক্ষ্য করেছি, পরীক্ষার কয়েকদিন আগেই শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে ফেসবুকে একাধিক ব্যক্তি বা গ্রুপের পেজ থেকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেখান থেকেই পরীক্ষার আগে বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং গণিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। এমনকি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে বলা হয়েছে, যাদের প্রশ্ন লাগবে, তারা ফোন করুন। আমাদের প্রশ্ন, এমন প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে ১৭ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যখন ফাঁস করা হলো, তখন রাষ্ট্রের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কী করছিল? এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় কেন দেশের এত বড় পুলিশ বাহিনীরই বা চোখ এড়িয়ে গেলো? আবার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা জেনেও কেন পরীক্ষা বাতিল করা হলো না? এর কি কোন প্রতিকার হবে? নাকি আগের ঘটনাগুলোর মতোই এ ঘটনাও চাপা পড়ে যাবে নতুন কোন ঘটনার আড়ালে?