তৈরি পোশাক শিল্প খাতে সবুজায়নে ‘বিপ্লব’ ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) কর্তৃক ‘২০২১ ইউএসজিবিসি লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমএই।
সারা বিশ্বের পোশাক শিল্প খাতের মধ্যে একমাত্র বিজিএমইএ’ই এই পদক অর্জন করল। স্বাস্থ্যসম্মত, ন্যায়সঙ্গত ও স্থিতিস্থাপক ভবন এবং গোষ্ঠী তৈরিতে টেকসই উদ্ভাবন করার পুরস্কার হিসেবে এই পদক দেয়া হয়েছে।
শনিবার বিজিএমইএ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি বিজিএমইএ। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউএসজিবিসি বিশ্বজুড়ে এই পদক প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেছিল।
এই পদক অর্জনের বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা তৈরিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত ১৪৩টি পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা হিসেবে ইউএসজিবিসি থেকে ‘লিড প্লাটিনাম’ সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪১টি প্লাটিনাম কারখানা। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাটাগরিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি কারখানার ৩৯টিই বাংলাদেশে অবস্থিত।
আরও প্রায় ৫০০টি কারখানা সার্টিফিকেশনের অপেক্ষায় আছে। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের দূরদর্শিতা, প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও উদ্যোগের কারণে।
তিনি বলেন, পোশাকখাতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার পর আমরা শিল্পটিকে পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ নেই। গত প্রায় এক দশকে উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, নিরাপত্তা থাতে হাজার কোটি টাকা ব্যয়, এবং সরকার-ক্রেতা-উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় আজকে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প একটি নিরাপদ শিল্প হিসেবে বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে। পরিবেশ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা শিল্পে আমল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের এই উদ্যোগ ও অর্জন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হযেছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এ খাতে নিরাপদ, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নে গর্ব করার মতো কিছু অর্জন তুলে ধরতে চাই। হংকং ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান ‘কিউআইএমএ’ এর মতে এখিকাল সোর্সিং এর দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে।
মূলত গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের গুণগত মান, কমপ্লায়েন্স, কর্মঘণ্টা ও শ্রমমানের বিভিন্ন দিক মূল্যায়ন করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি এমন একটি সময়ে এসেছে যখন করোনার মহামারির কারণে এ শিল্পে একটি সংকটময় সময় পার করছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এই অর্জন নি:সন্দেহে আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
কারখানায় নিজেদের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, কর্মীদের লিঙ্গ বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রেও এ শিল্পে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, কমপ্লায়েন্স, কারখানায় পেশাগত নিরাপত্তা বিধানেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে।
এখন ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) কর্তৃক ‘২০২১ ইউএসজিবিসি লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছি আমরা। বিশ্বের পোশাক খাতের একমাত্র সংসঠন বিজিএমইএ, যেটি এই অনন্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এসব অর্জনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, আমাদের সহনশীলতা, উদ্যোক্তাদের একনিষ্ঠতা, গতিশীলতা, ত্যাগ ও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। আর এসব অর্জনের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে সফল হয়েছি। বিশ্বে বাংলাদেশ তার দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখতে সক্ষম হযেছে।
ফারুক হাসান বলেন, গত ১০ বছরে আমরা রপ্তানি দ্বিগুণের বেশি করতে সক্ষম হয়েছি। ২০১১ সালে যেখানে রপ্তানি ছিল ১৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০১৯ সালে আমরা ৩৩ দশমিক এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছি। ২০২০ সালে রপ্তানিতে বৈশ্বিক মহামারির একটি প্রভাবটি খুবই স্পষ্ট। তবু ঘুরে দাঁড়িতে চেষ্টা করছি আমরা।