জীবিকার সন্ধানে ছুটে চলা লাখো ভ্রমণকারীর জন্য শহরটির মানচিত্রে নয়া দিল্লি ও পুরানো দিল্লি রেলস্টেশন হয়তো শুধু যাতায়াতের একটি রুট মাত্র। কর্মব্যস্তার জন্য অনেকেই প্রতিদিনের এই ব্যস্ত রেলস্টেশনের চারপাশে এক মুহূর্তের জন্যও ফিরে তাকানোর সুযোগ পান না বা প্রয়োজনও মনে করেন না। কিন্তু নোংরা, কোলাহলপূর্ণ আর ব্যস্ত এই রেলস্টেশন হাজারো শিশুর বাসস্থান। আর এইখানেই পুলিশ বেশিরভাগ নিখোঁজ শিশুকে খুঁজে পান। রেকর্ড অনুযায়ী বিগত ৩ বছরে দিল্লি পুলিশ এই দুই রেলস্টেশনে প্রায় ৩ হাজার ৩২১ টি নিখোঁজ শিশু উদ্ধার করেছেন। আর এই বছরের জুন পর্যন্ত রেলওয়ে পুলিশ ৩২৩ টি নিখোঁজ শিশুকে খুঁজে পেয়েছেন নয়া দিল্লি ও পুরানো দিল্লি রেলস্টেশনে।
রেলওয়ে পুলিশদের কোনো একাকী ঘুরে বেড়ানো ছোট শিশুকে পুলিশস্টেশনে না নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধারের পরিকল্পনাগ্রহণকারী ডিসিপি সঞ্জয় ভাটিয়া বলেন, ২০১২ সালে তিনি উপলব্ধি করেন এই দুই রেলস্টেশনে অনেক শিশু ছন্নছাড়াভাবে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। যাদের বেশিরভাগই পরিবারের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। কেউ কেউ বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। আবারা কেউ কেউ রেলস্টেশনে পাওয়া যায় এমন সস্তা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে।
এই ধরণের নিখোঁজ ছেলে-মেয়েদের সংখ্য দিন দিন বাড়ছে। তাই ডিসিপি সঞ্জয় ভাটিয়া এই নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধার করে তাদের পুর্নবাসনের সিদ্ধান্ত নেন। বেশিরভাগ নিখোঁজ শিশুদের রেলস্টেশনেই কেনো পাওয়া যায় এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ডিসিপি সঞ্জয় বলেন, রেলস্টেশন একটি ছোট শহর এলাকার মতো। এখানে পাখা, টয়লেট, ট্রেন, খাবার পানি, সস্তা খাবার সহজেই পাওয়া যায়। এমনও অনেক গৃহহীণ শিশু আছে, যারা কাজ করে কিন্তু রাত কাটায় রেলস্টেশনে।
আবার অনেক শিশু আছে যারা বাড়ি থেকে পালিয়ে ট্রেনে করে অন্য কোথায় চলে যেতে চায়, কিন্তু যেতে না পেরে রেলস্টেশনেই থেকে যায়। তিনি আরো বলেন, বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা বেশিরভাগ শিশুরা বাসায় ফিরে যেতে ভয় পায়। তাদের অনেককেই পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর যারা বাসার ঠিকানা বা নিজেদের পরিচয় বলতে পারেনি, তাদের বিভিন্ন এনজিও পালক নিয়েছে। তাদের দায়িত্ব এখানেই শেষ নয় বলে সঞ্জয় বলেন, গত মাসে এনজিওকে তারা পুলিশস্টেশনের ভিতর জায়গা করে দিয়েছে যেখানে এনজিও কর্মীরা রুমের ভিতর ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া শেখাতে পারে।