ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসাদ ডাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ব্যালট পেপারে আগে থেকে সিল মারা থাকার কারণে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা ভোট বর্জন করেছে।
এ ঘটনায় কুয়েত মৈত্রী হলে ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন স্থগিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সামাদ ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান।
ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই হল প্রভোস্ট সহ প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রায় এক হাজার সিল মারা ব্যালট পেপার উদ্ধার করেছে তারা। এসব ব্যালট পেপার যারা উদ্ধার করেছেন তারা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এর ফলে অন্যান্য হলে সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হলেও কুয়েত মৈত্রী হলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও তিন দফা দাবির প্রেক্ষিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়নি।
সোমবার সকাল ৯টায় ঢাবির বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, আগে থেকে সিল মারা ব্যালট পেপার নিয়ে শিক্ষার্থীরা হলের গেটের সামনে বিক্ষোভ করছেন। এসব সিল মারা ব্যালট পেপার পৌছে গেছে শিক্ষার্থীসহ সাংবাদিকদের কাছেও। কেননা রাস্তাতেই এসব আগের রাতে সিল মারা অসংখ্য ব্যালট পেপার।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘ভোটের আগের রাতেই সিল মারা হয়ে গেছে। এ নির্বাচন আমরা বয়কট করেছি। আমাদের তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু ভোট না হলে এখানে আর ভোট হবে। আমরা ভোট কারচুপির জবাব চাই। তাছাড়া আমাদেরকে হল প্রভোস্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফোন দিয়ে সরে যাওয়ার জন্য বলছেন। আমরা তাদেরও পদত্যাগ চাই। আমাদের এসব দাবি মেনে নেয়া না হলে আমরা অবস্থান ত্যাগ করব না।’
জাল ভোট যেভাবে দেয়া হয়েছিল তা বর্ণনা করতে গিয়ে হলের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘রাতে আমরা ২ টা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্র পাহারা দিয়েছি যাতে আগে থেকে সিল মারা না হয়। কিন্তু দুইটার দিকে সমস্ত গেট বন্ধ করে দেয়া হয় এবং আমাদের সেখানে আর থাকতে দেয়া হয় নি। এরপর সকালে আমরা খালি ব্যালট পেপার দেখতে চাইলেও তা দেখতে দেয়া হয় নি। এ সময় হল প্রভোস্ট শবনম জাহান আমাদেরকে বাধা দেয়। এরপর প্রক্টর স্যার আসলে কিছুক্ষণ পর আমাদেরকে ভোট সুষ্ঠু হওয়ার আশ্বাস দেন।
কিন্তু সোমবার সকালে ভোটকেন্দ্রের পাশে আমাদের রিডিং রুম থেকে প্রভোস্ট ম্যাম বস্তা ভর্তি সিল মারা ব্যালট পেপার সরাচ্ছেন। সেখান থেকে এক বস্তা ব্যালট পেপার আমরা ছিনিয়ে আনি ও ভোট বর্জন করি’।
এ সময় ‘ভোট চুরির জবাব চাই’ স্লোগানে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে হল থেকে বের হতে দেয়নি।
সকাল ৮টায় হলের মেয়েরা লাইনে দাঁড়ায়। এ সময় প্রক্টর গিয়ে সেখানে কথা বলে সময় কাটানোর চেষ্টা করেন। পরে শিক্ষার্থীরা জোর করে ঢুকলে সিল মারা ব্যালট উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় সোমবার সকাল ৯টার দিকে প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক সামাদ কুয়েত মৈত্রী হলে পৌঁছালে তার গাড়ি অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
তারা জানান, হল প্রভোস্টের পদত্যাগ ও ছাত্রলীগ প্যানেল বাদে নির্বাচনসহ তিন দফা দাবি মেনে না নিলে কুয়েত মৈত্রী হলে ডাকসু নির্বাচন হবে না।
ছবি: আরেফিন তানজীব ও মনোয়ার হোসেন মান্না