চাঁদে ভারতের দ্বিতীয় মহাকাশ যান চন্দ্রযান-২ এর বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বদান ও দেশটির মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র- ইসরো প্রধান ড. কে. সিভান একটি দরিদ্র কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসে হয়েছেন ‘রকেট ম্যান’। খালি পায়ে বাবার কৃষি ফার্মে কাজ করা গ্রামের সেই বিস্ময় বালক হয়ে এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ‘ইসরোর’ শীর্ষ নের্তৃত্ব।
ড. কে. সিভানেরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো রয়েছে অতীত জীবনের কষ্টার্জিত গল্প। কে. সিভানের জন্ম তামিল নাডু কন্যাকুমারী জেলার একটি কৃষক পরিবারে। সিভানই তার পরিবারের একমাত্র স্নাতক ডিগ্রিধারী ব্যক্তি। দারিদ্রতার কারণে তার এক ভাই ও দুই বোন উচ্চ শিক্ষা শেষ করতে পারেন নি।
গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কে সিভান বলেন: আমি যখন কলেজে পড়তাম, তখন আমি বাবাকে মাঠের কাজে সহায়তা করতাম। আর বাবা এই কারণেই আমাকে বাড়ির পাশের কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন। আমি যখন অংকে শতভাগ নাম্বার পেয়ে স্নাতক শেষ করলাম, তখন বাবার মত পাল্টালেন।
কে সিভান বলেন, স্যান্ডেল ও জুতা ছাড়াই আমি আমার বাল্যকাল পার করেছি। আমি কলেজেও শেষ করেছি ধুতি পড়ে। যখন আমি এমআইটিতে ভর্তি হয় তখন সর্বপ্রথম প্যান্ট পড়েছিলাম।
ড. কে সিভান স্কুল জীবনে তামিল মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা শেষ করেন। এসটি হিন্দু কলেজ থেকে তিনি স্নাতক শেষ করেন। এমআইটি থেকে ১৯৮০ সালে অ্যারোনিউটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন। এরপর ১৯৮২ সালে আইআইএসসি থেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেন। ২০০৬ সালে বোম্বের আইআইটি থেকে তিনি মহাকাশ প্রকৌশল বিদ্যায় পিএইচডি অর্জন করেন।
তিনি ১৯৮২ সালে ইসরোতে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত সকল রকেট প্রোগ্রামে তিনি সংযুক্ত ছিলেন। ২০১৮ সালে ইসরোর সেন্টারের চেয়ারম্যান হওয়ার আগে তিনি বিক্রম স্পেস সেন্টারের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনসহ রকেট উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তিনি ‘ইসরোর রকেট ম্যান’ হিসেবে পরিচিতি পান। ২০১৭ সালে ১৫ ফ্রেবুয়ারিতে পাঠানো ১০৪ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণেও মূল ভূমিকা পালন করেন তিনি।
কে. সিভান অবসর সময়ে তামিল ক্লাসিক্যাল শুনতে খুব পছন্দ করেন। এছাড়া বাগানও করাও তার অন্যতম শখ। বিক্রম স্পেস সেন্টারের পরিচালকের দায়িত্ব পালনের সময় সেখানে একটি সুন্দর গোলাপ বাগান তৈরি করেন তিনি। রাজেশ খান্নার ‘আরাধনা’ সিনেমাটি তার সবচেয়ে পছন্দের সিনেমা।
চাঁদে ভারতের দ্বিতীয় মহাকাশ যান চন্দ্রযান-২ এর সাথে অবতরণের ঠিক আগ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ ভারতবাসী সমবেদনা জানিয়েছেন দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো প্রধান ড. কে. সিভান ও তার বিজ্ঞানী দলের প্রতি।
চন্দ্রযান-২ অবতরণে ব্যর্থ হওয়ার পর দেশের পক্ষ হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরো বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য বলেন, জাতি আপনাদের সাথেই আছে। মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি ভবিষ্যৎ এরকম আরো মাইলফলক স্পর্শ করবে বলে আমি আশাবাদী।
চন্দ্রযান-২ এর উৎক্ষেপণ হয়েছিল গত ২২ জুলাই। মহাকাশযানটির ইঞ্জিন অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী হওয়ায় এটি কয়েক সপ্তাহ পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে গতি সঞ্চয় করেছিল। ২২ দিন পর পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে চন্দ্রযান-২ চাঁদের দিকে রওনা হয়।
এরপর গত ২০ আগস্ট চন্দ্রযান-২ চাঁদের কক্ষপথে অবস্থান নেয়। ২ সেপ্টেম্বর মূল মহাকাশযান থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এর ল্যান্ডার। ‘বিক্রম’ নামের ল্যান্ডারটি অবতরণের উদ্দেশ্যে ঠিকঠাকভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠের দিকে নেমে আসতে শুরু করলেও ২ কিলোমিটার বাকি থাকতেই হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।