কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় হতাহতের ঘটনায় চরম উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। আগের মতো এবারও উত্তেজনার তাপ লেগেছে ক্রিকেটে। প্রতিক্রিয়াটা ভারতের দিক থেকেই বেশি। ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ছবি সরানো শুরু হয়েছে। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ না খেলারও আওয়াজ উঠেছে। পাকিস্তান সুপার লিগের খেলা দেখানো বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় কোম্পানি।
হামলায় ৪৪ জন নিহত হওয়া সেনাদের পরিবারের পাশে ভারতের বিভিন্ন মহল থেকে অনেকেই দাঁড়িয়েছেন। ক্রিকেটাররাও ব্যতিক্রম নন। আগেই বীরেন্দ্র সেবাগ, গৌতম গম্ভীর, শেখর ধাওয়ানরা নিজেদের মতো করে নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পরে সেই পথে হাঁটেন মোহাম্মদ সামি এবং হরভজন সিংও।
সামি নিহতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। আর হামলা ঘটনায় সরাসরি পাকিস্তানকে তোপ দেগেছেন হরভজন সিং। তিনি কোনো রাখঢাক না করেই বলেছেন, ভারতের কোনোভাবেই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা উচিত নয়। দেশের সঙ্কটের মুহূর্তে দু’চার পয়েন্টের দিকে না তাকানোই উচিত বলে মনে হচ্ছে তার।
হরভজনের কথায়, ‘ভারত এমনিতেই যথেষ্ট শক্তিশালী দল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে না খেললেও ভারত বিশ্বকাপ জেতার ক্ষমতা রাখে।’
এদিকে, মুম্বাইয়ের ব্র্যাবোর্ন স্টেডিয়াম, মোহালির আইএস বিন্দ্রা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পর জয়পুরের সোয়াই মানসিংহ স্টেডিয়াম থেকেও সরানো হয়েছে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ছবি।
ভারতের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তান ক্রিকেটারদের ছবি থাকা নতুন কিছু নয়। ভারতের সব স্টেডিয়ামেই রয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেটারদের ছবি। তবে ছবি সরানোর ঘটনায় বোর্ডের তরফ থেকে কোনো নির্দেশ নেই বলেও জানাচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া। স্পর্শকাতর এই বিষয় নিয়ে কোনো কর্মকর্তাই প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না।
ভারতের আইএমজি রিলায়েন্স এবং তাদের সহযোগী টিভি সম্প্রচার সংস্থা ডি-স্পোর্টস পিএসএল থেকে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। যেভাবে কোম্পানিটি পিএসএল সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে এবং যেভাবে ভারতের বিভিন্ন স্টেডিয়াম থেকে ইমরান খান-সহ ক্রিকেটারদের ছবি সরানো হচ্ছে, তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এ নিয়ে তারা আইসিসিতে অভিযোগও জানাতে যাচ্ছে।
যা নিয়ে পিসিবির বক্তব্য, ‘শুধু যে ভারতে পাকিস্তান সমর্থকরা পিএসএল দেখতে পাচ্ছেন না সেটি নয়, ভারতে এখন এই লিগের ডিজিটাল সম্প্রচারও বন্ধ। সেই সঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান-সহ অনেক বিখ্যাত পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ছবিও সরানো হচ্ছে সেদেশের ঐতিহ্যপূর্ণ ক্লাব থেকে। এটা খুবই নিন্দার। চলতি মাসের শেষদিকে দুবাইয়ে যে আইসিসির বৈঠক হবে, আমরা সেখানে এই বিষয়টি তুলব।’
সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, খেলা এবং রাজনীতিকে আলাদাভাবে দেখতে হবে। কিন্তু, যেভাবে সাম্প্রতিক ঘটনা এগিয়েছে, তাতে আমরা খুব হতাশ। ইতিহাস দেখিয়েছে, খেলাধুলো বিশেষ করে ক্রিকেট, দেশের মানুষ এবং দেশের সঙ্গে একটা সেতু তৈরি করতে সক্ষম হয়।’
আপাতত, দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতার সঙ্গে ক্রিকেটেও যে তীব্র জট তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট। প্রশ্ন উঠছে, বিশ্বকাপে দু’দেশের ম্যাচ নিয়েও। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন যা, তাতে খুব সহসা এই জট কাটবে বলে মনে হয় না।