মহামারী করোনাভাইরাস যখন দিন দিন শঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে, বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে যখন নজিরবিহীন ধ্বস, তখন বাংলাদেশের জন্য এলো এক সুখবর। করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ) প্রথমবারের মতো ৩৫ বিলিয়ন ডলারের (তিন হাজার ৫০০ কোটি) মাইলফলক অতিক্রম করেছে। রপ্তানি আয় কমার পরও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় এই রেকর্ড হলো।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার বা তিন হাজার ৫০৯ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় দুই লাখ ৯৮ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরে)।
রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেয়ায় এখন বৈধপথে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। এ ছাড়া করোনাকালীন আমদানি ব্যয়ের চাপ কম, দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাইকার বৈদেশিক ঋণসহায়তা ও বিশ্ব সংস্থার অনুদানের কারণেও রিজার্ভ বেড়েছে। এর আগে গত ৩ জুন পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ রেকর্ড ৩৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল।
সেই হিসেবে এক মাসে দুবার রিজার্ভের রেকর্ড হলো। এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলার) রিজার্ভ অতিক্রম করেছিল। এরপর দীর্ঘদিন ৩১ থেকে ৩২ বিলিয়ন ডলারে ওঠানামা করে রিজার্ভ।
করোনায় লকডাউনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা অনেক প্রবাসীর আয় বন্ধ হয়ে যায়। আবার অচলাবস্থার কারণে অনেকে দেশে অর্থ পাঠাতে পারেননি। এসব কারণে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস রেমিট্যান্সের প্রভাব কমে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে মে মাসে রেমিট্যান্স পাঠাতে থাকেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গত মে মাসে ১৫০ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠান প্রবাসীরা।
করোনা সংকটে দেশের জন্য এটা অবশ্যই সুখবর। রিজার্ভের রেকর্ড এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই আমাদের আশাবাদ। তবে এজন্য যথাযথ কর্মপন্থাও গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে বিদেশে যেসব প্রবাসী সমস্যায় আছেন তাদের বিষয়েও নজর দিতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধাক্কা খাওয়া অর্থনীতি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এজন্য যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে এগিয়ে আসতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।