নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় চরহাজারী ইউনিয়নে একটি বিয়ের ঘটনা সাড়া ফেলেছে। চ্যানেল আই অনলাইন-সহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে তা নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেই খবরের সারমর্ম হলো- বিয়ের সব আয়োজন শেষে সারাদিন অপেক্ষার পর বর উপস্থিত না হওয়ায় কনে অজ্ঞান হয়ে যান। মানবিক বিবেচনায় এক পর্যায়ে সেই কনেকে বিয়ে করতে এগিয়ে আসেন পাশের ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন খোকন। স্থানীয় একজন চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় এবং দুই পরিবারের সম্মতিতে ওই বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বাংলা সিনেমা, নাটক এবং উপন্যাসের কল্যাণে এই ধরনের ঘটনার সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। তবে বাস্তবে তা কদাচিৎ ঘটে। স্বাভাবিকভাবেই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার এমন বিয়ের ঘটনা বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেই আলোচনা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে যেসব অঞ্চলে বাংলাদেশিদের বসবাস, সেখানেও পৌঁছে গেছে। যদিও তার সবটাই শোভন নয়, বেশিরভাগই নেতিবাচক ও কু-চিন্তা প্রসূত।
চ্যানেল আই অনলাইন খবরটি প্রকাশের পর ফেসবুক-সহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে তা শেয়ার করেছে। সেই খবরের প্রতিক্রিয়ায় সহস্রাধিক পাঠকের কাছ থেকে মন্তব্য এবং সেই মন্তব্যের উত্তর এসেছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি- সেই মন্তব্য এবং উত্তরের বেশিরভাগই অশোভন, কু-চিন্তা এবং কু-যুক্তিতে ভরা। শুধু চ্যানেল আই অনলাইনের খবরেই এসব নেতিবাচক মন্তব্য আসেনি। অন্য গণমাধ্যমের শেয়ার করা খবরেও একই রকম মন্তব্য এবং উত্তর দেখা গেছে।
এসব অসংখ্য বাজে মন্তব্যের মধ্যে কয়েকটি ছিল এমন- ‘‘হয়তো ঐ নেতা বরকে গুন্ডা পান্ডা দিয়ে আসতে দেয়নি! আর ঐ দিকে বিয়েটাও সেরে নেয়’’। আরেকজন লিখেছেন, ‘‘মনে হয় এই ব্যক্তি আগে থেকেই এই মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো তাই ওই জামাইকে সাঙ্গ পাঙ্গ দিয়ে পথের মধ্যে আটকে রেখে নিজে কাজটা সেরে নিল’’। আরেক পাঠকের মন্তব্য, ‘‘বউ তো দেখি খুবই সুন্দরী। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কপাল ভালা। শুভ কামনা সতত। বর আসে নাই, নাকি তাকে আসতে দেওয়া হয় নাই? চিন্তার বিষয়।’’ অন্য একজন লিখেছেন, ‘‘অয়েও রব্বা,তাইলে বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক বিয়ালীগ নামে নতুন একটা দল গঠন করা দরকার এদের কাজ থাকবে শুধু স্বেচ্ছায় বিয়ে করা।’’ (মন্তব্যগুলো বানান-সহ হুবহু তুলে ধরা হয়েছে)
এরচেয়ে আরও বাজে বাজে মন্তব্য আছে। সেসবের অনেকগুলো প্রকাশেরও অযোগ্য। তবে খারাপ মন্তব্যের ভিড়ে আবার কেউ কেউ ওই পরিস্থিতি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন খোকনের প্রশংসাও করেছেন। এমনকি নেতিবাচক সমালোচনা যারা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। একজন লিখেছেন, ‘‘কমেন্ট পড়ে দেখলাম, মানুষ কীভাবে এতো নীচু মানসিকতার হলে একটা মহৎ কাজকে নিয়ে আজে বাজে কমেন্ট করে?’’
আরেকজনের মন্তব্য, ‘‘সাবাস বাপের বেটা ধন্যবাদ তোমাকে এমন একটি মহৎ কাজ করার জন্য তোমার মতো ভালো মনের মানুষ সমাজের নেতৃত্বে থাকা প্রতি জরুরী সামনে।’’ নুতন দম্পতির জন্য শুভ কামনা জানিয়ে একজন পাঠক লিখেছেন, ‘‘স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই পরিস্থিতিতে একটি মেয়ে কতটা হতাশ হয়ে পড়ে তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবেনা। দোয়া করি নবদম্পতির জীবন সুখি হোক।’’
কেউ কেউ আবার বিয়ে ঠিক করার পরও যে লোকটি শেষ পর্যন্ত বিয়ে করেনি, তারও কঠিন শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেছেন। পাঠকের এই মন্তব্যের সঙ্গে আমরাও একমত পোষণ করি। কেননা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর, সেই বিয়ে না করা বড় ধরনের প্রতারণা ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তার অবশ্যই তার শাস্তি হওয়া উচিৎ।
বর্তমান সময়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের নিয়ে বহু সমালোচনা আছে। খুন-সন্ত্রাস-ধর্ষণ-সহ সব রকম খারাপ কাজে তাদের নাম উঠে আসে। সেসব কাজের তালিকা এতটাই দীর্ঘ যে, তাদের মধ্যে কিছু নেতাকর্মীর ভালো কাজও তাতে চাপা পড়ে। আবার সিংহভাগ মানুষের ধারণা, রাজনৈতিক দলের নেতারা ভালো কাজ করে না। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের। আলাউদ্দিন খোকনও সেই পূর্ব ধারণার শিকার।
তবে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, এমন পরিস্থিতি সেই কনে এবং তার পরিবারের অবস্থা কেমন হয়। আলাউদ্দিন খোকন ও তার পরিবার ওই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়েছে। মানবিক দিক বিবেচনায় অবশ্যই তিনি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তাই এমন ভালো কাজে নেতিবাচক সমালোচনা কোনোভাবেই ঠিক নয়।