উত্তম কুমারের জীবনী ভারতীয় টেলিভিশন স্টার জলসায় নিয়মিত প্রচার হয় ‘মহানায়ক’। সেখানে উত্তম কুমারের উত্থান-পতন’র কাহিনী ফুটে উঠছে। পাশাপাশি উত্তমের সিনেমা ক্যারিয়ায়ে তিন নায়িকা সুচিত্রা, সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের কাহিনীও ফুটে উঠেছে মহানায়ক’এ।
কিন্তু উত্তমের শেষদিনের সঙ্গী সুপ্রিয়া দেবী মনে করেন ‘মহানায়ক’ নাটকে তাকে একদম রাস্তার মেয়ে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কিনা ছবিতে কাজ করার জন্য পরিচালকের পা পর্যন্ত ধরতে হয়েছে। নাটকে নিজেকে এভাবে দেখতে পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজারকে সুপ্রিয়া দেবী বলেন, মহানায়ক দেখছি না। জঘন্য সব মিথ্যে কাহিনী নিয়ে নির্মাণ হয়েছে। প্রথম পর্ব থেকেই উত্তমকুমার জীবনী নিয়ে ধ্যাষ্টামো হয়েছে।
‘মহানায়ক’ সিরিয়ালে নিজেকে নিয়ে আপত্তির জায়গা তুলে ধরে সুপ্রিয়া বলেন, আমাকে তো একেবারে প্রথম থেকেই রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। ঘরে-বাইরে আমি রাস্তার মেয়ে। আমার এন্ট্রিটাই তো অতি নিম্নরুচির। অপমানজনক। ভাষ্যকার আমার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে দর্শকের সঙ্গে। ওই যে মেয়েটি একা হেঁটে আসছে, তাকে কেউ দেখছে না। একটা ক্যামেরাও এগিয়ে আসছে না। প্রিয়া। প্রিয়া চৌধুরী। উঠতি নায়িকা ইত্যাদি ইত্যাদি।
দেখানো হচ্ছে, মহানায়কের জন্য আমি পাগল। আমি সিরিয়ালে বলছি, অরুণকুমারের নায়িকা হওয়ার জন্য আমি ‘সব’ করতে পারি। ওই পার্টিতে প্রিয়া চৌধুরী, অর্থাৎ সুপ্রিয়া চৌধুরী অবাঙালি প্রোডিউসার ঝুনঝুনওয়ালার কাছে বেহায়াপনা করে ঝুলে পড়ছে। বলছে ‘আজ আমায় অরুণকুমারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতেই হবে।
কিন্তু সিরিয়ালের অনুমতি এবং টাকা পয়সা পাওয়ার পর এতো রাগ কেন প্রশ্ন করা হলে প্রচণ্ড চিৎকার করে সুপ্রিয়া দেবী বলেন, কে বলে এ সব কথা, আমি অনুমতি দিয়েছি? টাকা নিয়েছি? অনুমতি দেওয়ার, টাকা নেওয়ার আমি কে? এটা কি আমার লেখা উত্তমকুমারের জীবনী নিয়ে করা? তা যদি হতো এমন মিথ্যাচার হতো না। এই কি ‘মহানায়ক’ উত্তমকুমারের জীবন? যাকে প্রথম শ্যুটিং-এর দিন ফ্লোর থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল! কোথায় তার সীমাহীন কষ্ট আর অমানুষিক স্ট্রাগল’র অবিশ্বাস্য সব কাহিনী? যা দিয়ে সত্যিকারের ‘মহানায়ক’ তৈরি হতে পারত। সেটা তো হয়নি, বরং উল্টে… না হওয়ার আরও কারণ আছে অবশ্য।
‘বসু পরিবার’ উত্তম-সুপ্রিয়ার সিনেমার পর্দায় পথচলা। তাদের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা ‘শুন বরনারী’। ওই ছবির পরই শুরু ঘনিষ্টতার। দুজনের সংসারেই তখন টানাপোড়েন। ব্যক্তি জীবনে সেই শূন্যতা পূরণে আরো কাছে আসেন দু’জন। প্রেম হয়। নির্ভরশীলতা বাড়ে। কিছুদিন পরই নিজের বাড়ি ছেড়ে সুপ্রিয়ার ফ্ল্যাটে উঠে পড়েন উত্তম কুমার।
রূপালী পর্দার মতো জীবনে চলার পথেও জুটি বেঁধে ফেলেন দুজন। একসঙ্গে কাটিয়ে দেন ১৭ বছর। এ নিয়ে নিন্দা, অপবাদ কম সইতে হয়নি দুজনকে। কিন্তু তারাই তো সত্যিকারের জুটি।