জানাজা শেষে সোনালী পাড়ের কালো কাপড়ে মোড়ানো কফিনের সারি থেকে একটি একটি কফিন তুলে দেয়া হচ্ছিল শোকাতুর স্বজনদের হাতে। এক সময় দেখা গেল মঞ্চে মাত্র ৩টি কফিন। এরমধ্যে সবচেয়ে ছোট কফিনটির গায়ে শোকের রঙে বড় বড় হরফে ইংরেজিতে লেখা অনিরুদ্ধ জামান।
অন্য দুটি বড় কফিনের একটি অনিরুদ্ধ’র বাবা রফিক জামান রিমুর। আরেকটি মা সানজিদা হকের।
সোমবার বিকালে আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পর প্রাণহীন, নিথর দেহগুলো একে একে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
প্রথমে অনিরুদ্ধ। এরপর রফিক জামান। শেষে সানজিদা হকের কফিন নিয়ে তিনটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন সেনা সদস্যরা। এরপর অনন্ত যাত্রার পথে একটু একটু করে এগিয়ে যায় তিনটি কফিন। সামনে প্রিয় সন্তান, তার পেছনে স্ত্রী আর মাঝে রফিক জামান রিমু।
তাদের নেপালে যাওয়ার কারণ ছিল কর্ম জীবনের ব্যস্ততায় পরস্পরকে একটু সময় দেয়া। এ জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন বন্ধুরাও। কিন্তু নেপালে পৌঁছানোর আগেই শেষ হয়ে গেলো সব কিছু। মর্মান্তিক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো তাদের জীবন।
রফিক জামানের স্বজনেরা জানিয়েছেন, আর্মি স্টেডিয়াম থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে রাজধানীর সোবহানবাগে। সেখানে তৃতীয় জানাজা হবে। এরপর তাদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের পরিষদের (পিএনএসপি) কার্যালয়ে।
এখান থেকে তাদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে তাদের।
গত ১২ মার্চ নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে ছিলেন রফিক জামান রিমু, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা এবং তাদের সাত বছরের ছেলে অনিরুদ্ধ জামান।
সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে রফিক জামান প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। সানজিদা হক হাঙ্গার প্রজেক্ট নামে একটি এনজিওতে কাজ করতেন। অনিরুদ্ধ ছিল ধানমন্ডির অরণি স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র।