বাংলাদেশে হিন্দি ছবি চলে না, এই ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’। মুক্তির একমাস পার হলেও এখনও ছবিটি দেশের সিনেপ্লেক্সগুলোতে রমরমিয়ে চলছে। দেশের সিনেমা হলে হিন্দি ছবির এই সাফল্যকে ‘মহাবিপদ সংকেত’ হিসেবে দেখছেন শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চিত্রনায়ক জায়েদ খান।
শুরু থেকে বাংলাদেশে ভারতীয় ছবি মুক্তির ঘোর বিরোধিতা করে আসছেন এই নায়ক। ‘জওয়ান’র সাফল্যের পর জায়েদ চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে বলেন, গত ঈদে প্রিয়তমা, সুড়ঙ্গ, প্রহেলিকা ছবিগুলো ভালো গেছে। যখনই আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল তখনই শত কোটি বাজেটের ‘জওয়ান’ মুক্তি দেয়ায় দেশের অন্যান্য ছবিগুলো হুমকিতে পড়লো। শুধু জওয়ানের কারণে ‘অন্তর্জাল’ ছবির মুক্তি পেছালো। প্রযোজক ঠিকই বুঝেছে এই কষ্ট। গত সপ্তাহে ‘দুঃসাহসী খোকা’, ‘বৃদ্ধাশ্রম’ ছবিগুলো মুক্তির পর কত হল পেল? দেশের ছবির হল না পাওয়া এই দায় কে নেবে? বড় বাজেটের হিন্দি ছবি আনায় আমাদের দেশের সিনেমা ধ্বংস হচ্ছে। একজন শিল্পী হিসেবে এটা আমি সহ্য করবো না।
জায়েদ খান মনে করেন, বলিউডের বড় বাজেটের ছবিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কম বাজেটের ছবি মুক্তি দেয়া মানে হাত পা বেঁধে পানিতে ছেড়ে দেয়া। তিনি বলেন, দুই ঈদে ছবির ব্যবসা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি আগাবে না। বাকি ১১ মাস হল চলবে কী দিয়ে? হিন্দি ছবি দিয়ে হল বাঁচানোর চেষ্টা আসলে বৃথা। সিনেমা হল বাঁচাতে হলে দেশের ছবি লাগবে।
হিন্দি ছবি এদেশে মুক্তির নেপথ্যে এফডিসির সংগঠনগুলোকে দায়ী করে জায়েদ বলেন, এফডিসির সংগঠনগুলোর সুপারিশে হিন্দি ছবি এসেছে। আমি যখন শিল্পী সমিতির দায়িত্বে ছিলাম এই কাজে রাজি হয়নি। যেহেতু সিনেপ্লেক্সে হিন্দি ছবি ভালো চলছে, তাই সিনেপ্লেক্স বাড়িয়ে বাজার দখলের চেষ্টা হচ্ছে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, ভবিষ্যতে সব শিল্পী কলাকুশলী বেকার হয়ে যাবে। কারণ, দেশের প্রযোজক যখনই সিনেমা মুক্তি দিয়ে টাকা তুলতে পারবে না, মুক্তি দিতে চাইবে না তাই আগামীতে আর সিনেমা হবে না।
জায়েদ খান বলেন, হিন্দি ছবি দিয়ে বাংলা সিনেমা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না, বরং এদেশ থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। আগে যুক্তি দেয়া হয়েছিল, হিন্দি ছবি এলে প্রতিযোগিতা বাড়বে। কিন্তু আমার কথা হলো প্রতিযোগিতা বাড়তে হলে কাজ হতে হবে। সেই টাকা কই? কে লগ্নি করবে? আগে তাও শিল্পী কলাকুশলীরা কাজ করে খেতে পারতো, আগামীতে তাও পারবে না।
এই নায়ক বলেন, মায়ের যদি ক্যানসার হয়, তাহলে তার চিকিৎসা করা উচিত, তাই বলে বাইরে থেকে মা ভাড়া করে এনে তাকে তো মা ডাকতে পারি না, তাই না? আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করতে পারি ভালো সিনেমা করার। আরেকদিকে সবাই শুধু সিনেপ্লেক্স বাড়াচ্ছে, কিন্তু সিঙ্গেল স্ক্রিন কই? সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোর বরং পরিবেশ উন্নত করা উচিত।
সবকিছু আমদানি হলে হিন্দি ছবি আসতে সমস্যা কোথায়? জায়েদের উত্তর, আমাদের ছবিগুলো সেখানে চালানো হচ্ছে না কেন? আমাদের কয়টি টিভি চ্যানেল সেদেশে চলে? হিন্দি ছবি এদেশে আমদানির প্রেক্ষিতে বাংলা সিনেমা ওই দেশে চালানো হয় না কেন? কয়টা হলে চলছে কোনো খবর পাই না কেন? বিশ্বায়নের দোহাই দিয়ে এই যুগে অন্য জিনিস এনে নিজেদের সংস্কৃতি তো ধ্বংস হতে দিতে পারি না। এগুলো জেনেই বঙ্গবন্ধু আইন করে গিয়েছিলেন, উপমহাদেশীয় ভাষার ছবি বাংলাদেশ প্রবেশ করবে না। খোঁজ নিয়ে দেখুন, কলকাতাও আগে রমরমা ছিল। সেখানে এখন হিন্দির পাশাপাশি তামিল-তেলুগু ছবির দাপটে সেখানকার শিল্পীদেরও কাজ কমে গেছে।