মাস্তুল ফাউন্ডেশন এবং আল যাকাত সাদাকা ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আয়োজন করেছে যাকাত সচেতনতা প্রোগ্রাম ‘যাকাত কনফারেন্স ২০২৪’। এর মূল লক্ষ্য ছিল যাকাতের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা, সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষদের মধ্যে যাকাত বিতরণের ক্ষেত্রে একটি কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করা এবং যাকাতের অনুশীলন প্রচার করা।
সোমবার ৪ মার্চ প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও-তে এই কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশিষ্ট ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, যাকাত বিশেষজ্ঞরা, সমাজসেবী এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল।
প্রোগ্রামটি তিন অধিবেশনে বিভক্ত ছিল। প্রথম অধিবেশনে, বিশিষ্ট ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা যাকাতের গুরুত্ব এবং এর ফজিলত সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে, যাকাত প্রদানের সঠিক পদ্ধতি এবং দরিদ্র ও অভাবী মানুষের মধ্যে যাকাত বিতরণের কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়। আর তৃতীয় অধিবেশনে, যাকাত প্রদান জনসাধারনের মাঝে কিভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়।
দর্শক সারি থেকে অনেকেই যাকাত নিয়ে তাদের প্রশ্ন করেন, আলোচকরা তাদের প্রশ্নের উত্তর দিন।
কনফারেন্সে আলোচক এবং অতিথি ছিলেন, শাইখ মুফতি সাইফুল ইসলাম, ইমাম ও খতিব মসজিদ-উত-তাকওয়া; মুফতি ড. মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী ইসলামিক স্কলার ও গবেষক; ডা. মাহমুদ হাসান, ইসলামিক স্কলার ও অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান, মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর; নিয়াজ রহিম, চেয়ারম্যান সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া সিইও সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট; ড. মো. মিজানুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক সিএসপিএস; মুহাদ্দিস মাহমুদুল হাসান; ড. মু. মহিউদ্দিন আহ্মদ; মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী, পরিচালক (যুগ্মসচিব) বিআরটিএ; মো. কাওছারুল ইসলাম সিকদার, অতিরিক্ত পরিচালক (উপসচিব) বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ; এসডি খান, মুস্তফা জুহায়ের, প্রফেসর ড. গোলাম নবি; মুফতী গাজী সানাউল্লাহ রাহমানীসহ আরও অনেকেই।
শাইখ মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, যাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক ফরজ। এটি কেবল ধনী ব্যক্তিদের জন্য নয়, বরং সকল মুসলমানে বাধ্যতামূলক।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, যাকাত কেবল অর্থ প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা। মাস্তুল ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।
মাস্তুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কাজী রিয়াজ রহমান বলেন, যাকাত কনফারেন্সের আসল উদ্দেশ্য হলো সবার মাঝে যাকাত নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সবাইকে যাকাত প্রদানে উৎসাহ দিতে আমরা কাজটি করে যাব সবসময়।
এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে মাস্তুল ফাউন্ডেশন যাকাত সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং যাকাত প্রদানের জন্য মানুষকে উৎসাহিত করতে সক্ষম হয়েছে। প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীরা যাকাত প্রদানের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন। মাস্তুল ফাউন্ডেশন ভবিষ্যতেও নিয়মিতভাবে যাকাত সচেতনতা প্রোগ্রাম এবং যাকাত কনফারেন্সের আয়োজন করবে। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটি দরিদ্র ও অভাবী মানুষের মধ্যে যাকাত বিতরণের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করবে।
উক্ত প্রোগ্রামের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল আল যাকাত সাদাকা ফাউন্ডেশন, সেন্ট্রাল ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, রেডি বাংলাদেশসহ অনেকেই।
উল্লেখ্য, মাস্তুল ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান। মাস্তুলের প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে দাফন-কাফন সেবা প্রজেক্ট, যার মাধ্যমে করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিন হাজারের অধিক লাশ দাফন হয়েছে। মাস্তুলের রয়েছে নিজস্ব স্কুল, মাদ্রাসা এবং শেল্টারহোম যেখানে আবাসিক/ অনাবাসিক মিলে শতাধিক পিতা-মাতাহীন/ অনাথ/ এয়াতিম শিক্ষার্থী রয়েছে।
এছাড়াও কয়েক জেলায় প্রজেক্ট স্কুলগুলোতে হাজারের অধিক সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সকল শিক্ষার উপকরণ দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পুষ্টিকর খাবার, শিশু অধিকার, মৌলিক চাহিদা নিশ্চয়তা করা হচ্ছে। মাস্তুল ফাউন্ডেশনের রয়েছে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম করে তোলা হচ্ছে। যাকাত স্বাবলম্বী প্রজেক্টের মাধ্যমে এক হাজার জনের বেশি মানুষকে স্বাবলম্বী করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে বৃদ্ধ বাবা-মা দের জন্য মাস্তুল বৃদ্ধাশ্রম এবং মাস্তুল মেহমানখানা, যেখান থেকে শতাধিক অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের একবেলা পেট পুড়ে খাওয়ার ব্যবস্থা হয়।