স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম অগ্রপথিক ও ঊনসত্তরের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। প্রতিবছরের মতো এবারও শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গনে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা চলে।
কয়েক’শ প্রতিযোগীর মধ্যে দুই শাখায় বিজয়ী আটজনের হাতে পুরস্কার ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। পাশাপাশি যারা এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ্রহণ করেছে প্রত্যেককে একটি করে ক্রেস্ট প্রদান করা।
স্বৈরশাসক, পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন সার্জেন্ট জহুরুল হক। ক্যান্টনমেন্টে বন্দী অবস্থায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলি এবং বেয়নেটের আঘাতে ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তার প্রাণ যায়।
গণঅভ্যুত্থানের মহানায়কদের অন্যতম জহুরুল হক ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন। তাকে স্মরণ ও তার বীরত্বগাঁথা কর্মকাণ্ড শিশু-কিশোদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে গত ২৪ বছর ধরে জহুরুল হকের পরিবার এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর।
অন্যান্যের মধ্যে আরও ছিলেন শিশু সাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম, আকতার হোসেন, চিত্রকর ও কার্টুনিস্ট রফিকুন নবী, মনিরুজ্জামান, অশোক কর্মকার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব সারা যাকের, জহুরুল হকের পারিবারিক সদস্য নাজনীন হক মিমিসহ অনেকে। তারা নতুন প্রজন্মকে জহুরুল হককে হৃদয়ে ধারণ করার আহ্বান জানান।
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার আগে ফরিদুর রেজা সাগর শিশু কিশোরদের উদ্দেশে বলেন, যারা অনেক বড়মাপের মানুষ হন, তারা চলে যাওয়ার পর আমরা বিভিন্নভাবে স্মরণ করে থাকি। তারা এভাবে আমাদের স্মৃতিতে বেঁচে থাকেন। তোমরাও ভবিষ্যতে অনেক বড়মাপের মানুষ হও। দেশের জন্য কাজ করো। দেখবে তোমাদেরও সবাই এভাবে স্মরণ করবে। তোমাদের মধ্যে অনেক প্রতিভা আছে, সেগুলো বিকশিত করো।
চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী উপস্থিত শিশু কিশোরদের অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, বাচ্চারা যেভাবে আঁকতে চায় তাদের মতো করে আঁকতে দিন। তাদের উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া অভিভাবকদের উচিত নয়। কারণ, বাচ্চারা কঠিন কাজকে সহজ করে দেখে আর আমরা সহজ কাজটিকে কঠিন করে দেখি। কাজেই ওরা যেটা ভাবে, নিজেদের কল্পনায় দেখে সেটাই তারা আঁকে। তাদের এই ভাবনা শক্তি বৃদ্ধি করতে উৎসাহ দিতে হবে।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় শিশুবিভাগে প্রথম থেকে চতুর্থ হয়েছেন জাহির হাসান, আবদুল্লাহ আল আয়ান, আরাধ্যা বড়াল, আরশি হাসনাত। কিশোর বিভাগ থেকে প্রথম হয়েছেন আফ্রা নাওয়ার সিরাজী। দ্বিতীয় প্রত্যয় পাল রাজ, তৃতীয় আফরিনা ফারহা এবং চতুর্থ হয়েছে সাইয়ারা নক্ষত্র। পুরস্কার নেয়ার আগে প্রতিযোগিতারা কেউ কবিতা আবৃত্তি, কেউ আবার গান শোনায়। শিশু ও কিশোর দুই বিভাগে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের পরিবারের পক্ষ থেকে পাঁচ জন করে দশ জনকে পুরস্কার ও ক্রেস্ট দেয়া হয়।
চিত্রাঙ্কন সহযোগিতা করায় অনুষ্ঠানের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব সারা যাকের হাতে একটি চেক হস্তান্তর করেন নাজনীন হক মিমি।
ছবি: নাহিয়ান ইমন