অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর্দা উঠতে আর বাকি একটা সপ্তাহ। দ্বিতীয়বারের মতো আসরের আয়োজক সাউথ আফ্রিকা। টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক আগে স্বাগতিকদের অধিনায়কত্বে আনা হল আকস্মিক পরিবর্তন। ইসরায়েলপন্থী মন্তব্যের জেরে নেতৃত্ব হারিয়েছেন ডানহাতি ব্যাটার ডেভিড টিগার।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের উপর চলতি অভিযানের ঘটনা নিয়ে ইসরায়েলি সৈন্যদের সমর্থনে গতবছর মন্তব্য করেছিলেন টিগার। বিশ্বকাপ চলাকালীন বিষয়টি নিয়ে যেন বিক্ষোভ-সহিংসতার মতো কিছু না ঘটে, সেজন্য অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাকে। নতুন অধিনায়কের নাম এখনো জানানো হয়নি।
গত বছরের ২২ অক্টোবর সাউথ আফ্রিকার আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবিএসএ গ্রুপ ইহুদীদের মধ্যে অমিত উদীয়মান তারকা হিসেবে বিবেচিত করে টিগারকে। পুরস্কার অনুষ্ঠানে ১৯ বর্ষী ক্রিকেটার সেসময় বলেছিলেন, ‘আমি এই পুরস্কার পেয়েছি এবং হ্যাঁ, আমি এখন উদীয়মান তারকা। কিন্তু সত্যিকারের উদীয়মান তারকারা হলেন ইসরায়েলের তরুণ সৈন্যরা…।’
‘আমি এটি উৎসর্গ করতে চাই ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং যুদ্ধরত প্রতিটি সৈন্যের প্রতি, যাতে আমরা প্রবাসীদের মধ্যে বসবাস করতে পারি এবং উন্নতি করতে পারি।’
ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) শুক্রবার বিবৃতিতে জানিয়েছে, টিগার অধিনায়ক থাকলে তা বিরোধ এমনকি সহিংসতার কারণ হতে পারে। প্রতিবাদকারীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোও রয়েছে। সকল খেলোয়াড়, অনূর্ধ্ব-১৯ দল এবং ডেভিডের নিজের স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি খেলোয়াড় হিসেবে স্কোয়াডের সাথে থাকবেন এবং একজন নতুন অধিনায়কের নাম যথাসময়ে জানানো হবে।
সিএসএ বলেছে, ‘বিশ্বকাপ সম্পর্কিত নিয়মিত সুরক্ষা এবং ঝুঁকিগুলো নিয়ে অবহিত হচ্ছি। আমাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে গাজায় যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত বিক্ষোভগুলো টুর্নামেন্টের ভেন্যুগুলোতে প্রত্যাশিত ব্যাপার হতে পারে। আমাদের এও পরামর্শ দেয়া হয়েছে, প্রতিবাদকারীদের সাউথ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ডেভিড টিগারের অবস্থানের দিকে মনোনিবেশের সম্ভাবনা রয়েছে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যেও তারা দ্বন্দ্ব বা এমনকি সহিংসতার তৈরির কারণ হতে পারে এমন ঝুঁকি রয়েছে।’
‘বিশ্বকাপের সাথে জড়িত সকলের স্বার্থ এবং সুরক্ষা রক্ষার জন্য সিএসএ’র প্রাথমিক দায়িত্ব রয়েছে এবং সেই অনুসারে অংশগ্রহণকারী এবং দর্শকদের সুরক্ষার জন্য দায়িত্বরতদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শকে সম্মান করতে হবে। সকল পরিস্থিতিতে সিএসএ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ডেভিডকে টুর্নামেন্টের জন্য অধিনায়কত্ব থেকে মুক্তি দেয়া উচিৎ।’
টিগারের করা মন্তব্য নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছিল। দেশটির গণমাধ্যমজুড়ে ব্যাপকভাবে এটি প্রকাশিত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায়, প্যালেস্টাইন সলিডারিটি অ্যালায়েন্স (পিএসএ) সাউথ আফ্রিকান স্পোর্টস কনফেডারেশন এবং অলিম্পিক কমিটির কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করে।
পরবর্তীতে সিএসএ, লায়ন্স (ঘরোয়া ইউনিয়ন যেখানে টিগার খেলেন), চারটি জোহানেসবার্গ ভিত্তিক ক্রিকেট ক্লাব, একজন সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট সমর্থক, আবু আসভাত ইনস্টিটিউট অফ ন্যাশনাল বিল্ডিং (একটি সুশীল সমাজ গোষ্ঠী) এবং একটি কোম্পানির পরিচালক যারা লায়নদের সকলকে স্পন্সর করে, তারা অভিযোগ তুলে বিবৃতি দেয়।
পাবলিক সার্ভেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ আফ্রিকা (পিএসএ) বলেছে, টিগারের মন্তব্য ক্রিকেট সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ফাটল সৃষ্টি করেছে। বিচিত্র জাতিসত্তার অধিকারী সাউথ আফ্রিকা দলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তিনি উপযুক্ত কিনা, সেই প্রশ্নও সংগঠনটি তুলেছে। পিএসএ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দল থেকে টিগারকে অপসারণের দাবি জানিয়ে টুর্নামেন্ট চলাকালীন প্রতিবাদ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইসরায়েলের গাজা অভিযান ইস্যুটি চলতি সপ্তাহে আন্তর্জাতিক আদালতে নিচ্ছে সাউথ আফ্রিকা। এরপর থেকে আফ্রিকার দেশটির জনগণের ফিলিস্তিনপন্থী মনোভাব বেড়েছে।
এমাসে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ফিলিস্তিনপন্থীরা ভেন্যুর মূল গেটের বাইরে অবস্থান করছিল। এরপর তাদের পুলিশ নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যায়। তারা টিজারের অধিনায়ক হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। ম্যাচ চলাকালীন ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে গ্যালারির উত্তর দিকের স্ট্যান্ডে বসেছিল কয়েকজন ভক্ত। সিএসএ আশঙ্কা করছে, ইসরায়েলের সৈন্যদের পুরস্কার উৎসর্গ করা নিয়ে মন্তব্যের জেরে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বাড়বে।